25/06/2016 2:05 pmViews: 6

কিডনি কেন নষ্ট হয়, ভালো থাকবে কীভাবে

.

আমাদের দেহের বিপাকক্রিয়ায় তৈরি সব বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে কিডনির মাধ্যমেই বের হয়ে যায়। কিডনি অকার্যকর হয়ে গেলে শরীরের ক্ষতিকর বর্জ্য রক্তে জমা হয়। তখন বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে কিডনি অকার্যকারিতার হার ক্রমাগত বাড়ছে। আর কিডনি রোগ চিকিৎসার জনবল ও অবকাঠামো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই দুর্বল। তাই কিডনি সুস্থ রাখার দিকে নজর দিতে হবে এখনই।
কিডনি কেন নষ্ট হয়?
কিডনির অকার্যকারিতা দুই ধরনের। একটা হলো, স্বল্প সময়ে কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়া। কোনো কারণে কিডনিতে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ কমে গেলে, যেমন: মারাত্মক ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতায় এমন ঘটতে পারে। এর মূলে রয়েছে সুপেয় ও নিরাপদ পানির অভাব। পানিবাহিত রোগবালাই (যেমন: ডায়রিয়া, কলেরা ইত্যাদি) হলো এ ধরনের কিডনি অকার্যকারিতার প্রধানতম কারণ। টাইফয়েড বা ডেঙ্গুজ্বর, অকারণ অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশকজাতীয় ওষুধ সেবনের কারণেও হঠাৎ কিডনির সমস্যা হতে পারে। গ্রামাঞ্চলে অনিরাপদ উপায়ে প্রসবের কারণে অতি রক্তক্ষরণ হয় বা বিলম্বিত প্রসবের কারণেও কিডনির সমস্যা হতে পারে। তাই দেখা যাচ্ছে এ সমস্যার কারণগুলো প্রায় সবই প্রতিরোধযোগ্য। এ জন্য প্রয়োজন একটু সচেতনতা আর সতর্কতা।আরেক ধরনের কিডনি অকার্যকারিতা হয় ধীরে ধীরে। একে বলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ এবং কিডনির নিজস্ব কিছু রোগ এমন সমস্যার জন্য প্রধানত দায়ী। এই সমস্যার হার আমাদের দেশে বাড়ছে।
কিডনির চিকিৎসা ব্যয়বহুল
কিডনি অকার্যকারিতার সবচেয়ে শেষ ধাপ হচ্ছে এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ। এই পর্যায়ে ডায়ালাইসিস করাতে হয় অথবা প্রতিস্থাপন। দেশে চাহিদার তুলনায় কিডনি রোগের চিকিৎসা খুবই অপ্রতুল। তাই প্রতিরোধের দিকে নজর দেওয়া বেশি জরুরি। কিডনির সুস্থতার জন্য সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক সম্প্রদায় ও কর্তৃপক্ষ—সবারই সচেতনতা দরকার।
কীভাবে কিডনি ভালো থাকবে?
ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপের মতো রোগ যথাসময়ে নির্ণয় করা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সুনিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। বয়স ৪০ পেরোনোর পর প্রত্যেকেরই উচিত রক্তে শর্করা, রক্তচাপ ও প্রস্রাবে আমিষ ইত্যাদি পরীক্ষা করা। ধূমপান বর্জন করুন। ওজন যেন না বাড়ে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। খাবারে লবণের পরিমাণ কমান। আমরা প্রতিদিন প্রায় ১০ গ্রামের মতো লবণ খাই, কিন্তু ৬ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। অকারণ ওষুধ খাবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে বা দোকানদারের পরামর্শে তো নয়ই। নিরাপদ পানি পান করুন। সরকার যথাসময়ে কিডনি রোগ নির্ণয়ের লক্ষ্যে দেশের ১২ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের জনবলকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, যাঁরা রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে স্ক্রিনিং করতে পারবেন। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নিকটস্থ পাবলিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। কেবল এটুকু উদ্যোগেই ৬ কোটি মানুষ কিডনি অকার্যকারিতার ঝুঁকি থেকে বেঁচে যাবে।

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ : কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা 

Leave a Reply