৮৮ টি পদের মধ্যে ৩৭ পদ শূন্য ॥ মনপুরায় দেড় লক্ষ মানুষের জন্য ১জন ডাক্তার

03/11/2013 11:04 amViews: 29

pic-1মোঃ ছালাহউদ্দিন,মনপুরা প্রতিনিধি ॥ ভোলা জেলার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপজেলাকে ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রুপান্তর করা হয়। এরপর বিচ্ছিন্ন  উপজেলার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য মনপুরায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মান করা হয়। যা বর্তমানে ৫০ শয্যা হাসপাতালের নির্মান কাজ চলছে। বর্তমানে মনপুরা হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি সহ জনবল সংকটে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।
মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেলক্রে ৮৮ টি পদের মধ্যে ৩৭ টি পদ দীর্ঘদিন পর্যন্ত খালি পড়ে আছে। ১জন ডাক্তার কর্মরত থাকলেও প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় রোগীরা তেমন একটা চিকিৎসা পাচ্ছেনা। দৈনিক ৩ শতাধিক রোগী দেখে রীতিমত হাফিয়ে উঠেছেন বর্তমানে কর্তব্যরত একমাত্র মেডিকেল অফিসার ডা.আল মোমিন। একজনের পক্ষে এতরোগী দেখে উঠতে পারছেননা তিনি। দেড় লক্ষাধিক লোকের এই আবাসভূমিতে ১জন ডাক্তার প্রয়োজনের তুলনায নিতান্তই অপ্রতুল। দুর-দুরান্ত থেকে এসে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে ডাক্তারের নাগাল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী। অন্যদিকে শতশত রোগীকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত উপজেলা প.প কর্মকর্তার পদটি শূন্য পড়ে আছে। প.প কর্মকর্তার পদে একজনকে পোস্টিাং দিলেও এখনও যোগদান করেননি। ৪টি ইউনিয়নে ৪ জন ডাক্তারসহ সহকারী সার্জন কর্মরত থাকার কথা থাকলেও  কোন মেডিকেল অফিসার নেই। অনেক ডাক্তার আছেন মনপুরায় বদলি করা হলেও তারা এসে যোগদান করে চলে যান। পরে ডেপুটেশন সহ বদলি নিয়ে চলে যান অন্যত্র।
মনপুরা হাসপাতালটি বর্তমানে পদশুন্যতার ভারে জর্জরিত। সর্বমোট ৮৮ টি পদের মধ্যে ৩৭ টি পদই শূন্য। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসারের ১২টি পদের মধ্যে ১ জন বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন।এছাড়া কনসালটেন্ট সার্জারী,মেডিসিন,গাইনী,এনেসথেসিয়া,ডেন্টাল সার্জন,সহকারী সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার,মেডিকেল অফিসারের পদগুলো দীর্ঘদিন পর্যন্ত শূন্য।এছাড়া নার্স সুপারভাইজার ১টি পদ শূন্য। সিনিয়র স্টাফ নার্সের ৭ টি পদের মধ্যে ৩ টি পূর্ন থাকলেও বাকি ৪ টি পদ খালি পড়ে আছে। সিনিযার স্টাপ নার্স (নবশিষ্ট)৩ পদের মধ্যে ৩টি পদই শূন্য। তবে ৩ জন নার্স  থাকলেও ১ জন নার্স দীর্ঘদিন মেটানিকেল ছুটিতে রয়েছেন। এজন্য ভর্তিকৃত রোগীদের ২ জন নার্স দ্বারা সামলানো কষ্টসাধ্য। ফলে দৈনিক ৮ ঘন্টা ডিউটি করে হাফিয়ে উঠছেন আবার অনেক সময় ৮ ঘন্টার বেশী সময় তারা ডিউটি পালন করেন তারা। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ বদলীর চিন্তাও করছেন বলে জানা গেছে। তৃতীয় শ্রেনীর মোট মঞ্জুরকৃত ৪১টি পদের মধ্যে ১০টি পদই শূন্য। তৃতীয় শ্রেনীর শূন্য পদগুলো হচ্ছে প্রধান সহকারী কাম হিসাব ১জন,স্যাকমো ১টি পদ শূন্য,মেডিকেল ট্যাক ল্যাব ২টি পদই শূন্য,মেডিকেল ট্যাক রেডিও গ্রাফার পদটি শূন্য,মেডিকেল ট্যাক ফার্মাসিষ্ট ২টি পদের মধ্যে ২টি পদই শূন্য,ফার্মাসিষ্ট ১টি পদ শূন্য,অফিস সহকারী ২টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য,সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২টি পদের মধ্যে ১টি পদ কর্মরত থাকলেও বর্তমানে তিনি প্রেষনে ভোলা সদর রয়েছেন,স্বাস্থ্য সহকারী ১টি পদ শূন্য,সহকারী নার্স ১টি পদই শূন্য,ড্রাইভার ১টি পদ কর্মরত থাকলেও বর্তমানে প্রেষনে পটুয়াখালী টিভি হাসপাতালে রয়েছেন,মেডি:ট্যাক ডেন্টাল ১টি পদে কর্মরত থাকলেও প্রেষনে ঢাকায় রয়েছেন,চিকিৎসা সহকারী ১টি পদ শূন্য,৪র্থ শ্রেণীর ২০ টির মধ্যে ১৪ জন কর্মরত আছেন।বাকি ৬টি পদ শূন্য। ২০ জনের কাজ ১৪ জনের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয় বিধায় হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। চতুর্থশ্রেনীর শূন্য পদগুলো হচ্ছে আয়া ২টি পদের মধ্যে ১জন কর্মরত থাকলেও প্রেষনে তজুমউদ্দিন হাসপাতালে রয়েছেন অপর ১টি পদ শূন্য,ওয়ার্ড বয় ৩টি পদের মধ্যে ৩জন কর্মরত থাকলেও ২জন প্রেষনে ভোলা সদর হাসপাতালে রয়েছেন,এম.এল.এস ৫টি পদের মধ্যে ৩জন কর্মরত থাকলেও ১জন ২বছর পর্যন্ত অনুপস্থিত অপর ২টি পদ শূন্য,সুইপার ৫টি পদের মধ্যে ২ জন কর্মরত থাকলেও ১জন ্এ্যাম্বুলেন্স চালান বাকী ৩টি পদ শূন্য,নিরাপত্তা প্রহরী ২টি পদের মধ্যে ২জন কর্মরত থাকলেও ১জন প্রেষনে চরফ্যাসন হাসপাতালে রয়েছেন। ল্যাব টেকনেসিয়ানের ২ টি পদ খালি থাকায় প্যাথলজিক্যাল সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তাছাড়া প্যাথলজিক্যাল সংক্রান্ত ইন্সট্রুমেন্টগুলোও পরিচর্যার অভাবে প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে।এছাড়া হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় সঠিক ভাবে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার। দিনের বেলায় বিদ্যুতের কোন ব্যাবস্থায় না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারন রোগীরা। ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন সাব সেন্টার না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার সাধারন মানুষ। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে মনপুরা স্বাস্থ্যকমপেলক্রের প্রতিদিনকার কার্যক্রম। এব্যাপারে মনপুরা ম্যাডিকেল অফিসার ডা.আল মোমিন বলেন,আমাদের পর্যাপ্ত প্যাথলিজিক্যাল সারঞ্জাম ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন যন্ত্রপাতি না থাকা সত্বেও আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে করে এলাকার গরীব অসহায় মানুষগুলোকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। বর্তমানে ডাক্তার  সংকটের কারনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে । তবে পর্যাপ্ত প্যাথলিজিক্যাল সারঞ্জামাদি পেলে উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়া সম্বভ। বিচ্ছিন্ন উপজেলার সাধারন মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সু দৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন মহল।

Leave a Reply