৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধা মাকে ফেলে পালিয়ে গেল দুই অকৃতজ্ঞ সন্তান

ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার/মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার/নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/ সবচেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি/ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম/আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম। নচিকেতার এই গানের কথা যে কোনো বাঙালি হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। জীবনের সন্ধিক্ষণে বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব আর অবহেলার কথাই ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। নচিকেতার এই মর্মস্পর্শী গান গৌরনদীর ইথারে যেন ছড়িয়ে পড়ল। ৮৫ বছরের বৃদ্ধ মাকে কুমিল্লা থেকে গাড়িতে এনে বরিশালের গৌরনদী এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে পালিয়ে গেছে পাথর হৃদয়ের দুই সন্তান। সন্তানের এমন অবহেলার শিকার হয়ে আরাফাতুন নেছা নামের এই অশীতিপর বৃদ্ধা গত ৮ দিন রোদে পুড়ে আর শিশিরে ভিজে এখনও দুই সন্তানের প্রতীক্ষায় মহাসড়কের পাশেই বসে আছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি রাত থেকে টরকী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে মহাসড়কের পাশে এক বৃদ্ধাকে বসে থাকতে দেখেন আশপাশের লোকজন। জানতে চাইলে ওই নারী জানান, তার নাম আরাফাতুন নেছা। সেই থেকে মহাসড়কের পাশেই অর্ধাহার আর অনাহারে কেটে গেছে তার ৮টি দিন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা আরাফাতুন নেছাকে কিছু খেতে দিয়েছেন। তিনি সবার খাবারই খেয়েছেন। বৃদ্ধার কষ্টে সমব্যথী হয়ে কেউ কেউ তাকে কয়েকটি শীতবস্ত্রও কিনে দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে কাঁপা কাঁপা স্বরে আরাফাতুন নেছা জানান, তাদের বাড়ি কুমিল্লায়। তার দুই ছেলে শামীম ও শাহিন। দুই মেয়ে নুরজাহান ও শরিয়াতী বেগম। শামীম ও শাহিন তাকে গাড়িতে করে এনে এখানে বসিয়ে রেখে গেছে। এর বাইরে বৃদ্ধা আর কিছুই বলতে পারছেন না। কথা বলার ফাঁকে তিনি তার শামীম ও শাহিনের নাম ধরে ডাক দিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, আরাফাতুন নেছাকে তিনি তার বাড়িতে নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি জানান, বৃদ্ধার বিশ্বাস_ সন্তানেরা তাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য এখানেই আসবে। সন্তান যাতে নিতে এসে ফেরত না যায়, তাই তিনি তাদের অপেক্ষায় রয়েছেন।