৮০০ ইউপি কমছে জেলায় জেলায় সমস্যা তৈরির আশঙ্কা
বিশেষ প্রতিনিধি: দেশে আট শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কমছে। আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০ হাজারের নিচে রয়েছে এমন প্রায় আট শতাধিক ইউপি পাশের কোন ইউপি’র সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে। তাই ইউপি সংখ্যা কমার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে দেশের মোট ইউপি সংখ্যা চার হাজারের নিচে নেমে আসতে পারে। বর্তমানে দেশের ইউপি সংখ্যা চার হাজার ৫৪৬টি। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ পরিষদের স্টাফদের বেতন-ভাতা সরকারের কোষাগার থেকে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এমন চিন্তা করা হয়েছে। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের ইপ-১ অধিশাখা থেকে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর বিভক্তিকরণ নীতিমালা জারির কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ইউপি কমলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমস্যা তৈরি হবে। জেলায় জেলায় বাড়বে সংঘাত ও সংঘর্ষ। এছাড়া, স্থানীয় সমস্যা মেটানো কষ্টকর হবে। তারা জানান, নতুন নীতিমালার বেড়াজালে পড়বে ৬৪ জেলার অনেক ইউনিয়ন। এসব ইউপি বন্ধের কার্যক্রম শুরু হলে অস্থিরতা তৈরি হবে। সরকারি দল ও বিরোধী দলের চেয়ারম্যানদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী ইউপি গঠনের এখতিয়ার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি)। ফলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপের কারণে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ডিসিরা ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে এ বছরেই ইউপি সংখ্যা চার হাজার ৫৫৭তে উঠেছিল। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে যার সংখ্যা ছিল চার হাজার ৫০২টি। কিছু সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ একীভূত হওয়ায় ইউপি সংখ্যা কমে গেছে। ওদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা ইউপি গঠন সংক্রান্ত নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১১ (৪) এর ক্ষমতাবলে সরকার ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা কমপক্ষে ২০ হাজার এবং আয়তন কমপক্ষে ২০ বর্গ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হলো। এছাড়া, নতুন ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে ইউনিয়নের বাৎসরিক নিজস্ব আয়ের পরিমাণ ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা হতে হবে। এতে বলা হয়েছে, ইউপি গঠন বা বিভক্ত করার আবেদন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনসংখ্যা, আয়তন, বাৎসরিক আয়ের উৎস ইত্যাদি সম্পর্কিত শর্ত পূরণ হলে এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন। ডিসিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাব সম্পর্কে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ১১ অনুসারে কার্যক্রম হাতে নেবেন। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোন ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হলে বা নদী ভাঙন বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আংশিক এলাকা বিলুপ্ত হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নির্ধারিত জনসংখ্যা ও আয়তন কম হলে সংশ্লিষ্ট ডিসি ওই ইউনিয়নের নিকটবর্তী এক বা একাধিক ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত করে ইউনিয়ন গঠন করতে পারবেন। এছাড়া, যেসব ইউনিয়নে আয়তন ও জনসংখ্যা কমে গেছে ওইগুলোর পুনর্গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিসি প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেবে। ইউপি বিলুপ্তির বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করার সময় ওই এলাকার জনগোষ্ঠীকে অবহিত করে তাদের কোন আপত্তি থাকলে ওই বিষয়ে শুনানি নিয়ে তা নিষ্পত্তি করা হবে। আপত্তি শুনানির কার্যক্রমের রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে এবং সিদ্ধান্তের অনুকূলে যৌক্তিকতা লিপিবদ্ধ করতে হবে।