৩৪ জলদস্যুর অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা
৩৪ জলদস্যুর অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা
‘অন্যের কথায় লোভে পড়ে দস্যুতায় জড়িয়ে পড়ি। আমার জীবনের সুখ ও শান্তি বলে কিছু ছিল না। পরিবারের সদস্যদের সবাই নানারকম কটূক্তি করতো। র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে অন্ধকার জগৎ থেকে ফিরে এসেছি।’ গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মহেশখালী থানার বাইশা বাহিনীর প্রধান কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলার তিন থানা এবং কক্সবাজার জেলার দুই থানার মোট ১১টি বাহিনীর ২৪ জনসহ ৩৪ জন জলদস্যু র্যাবের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯০টি অস্ত্র এবং প্রায় ২০৫৬ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। জলদুস্যদের হাতে অত্যাচারিত নেসার উদ্দিন মাঝি জানান, তিনি মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হামলার শিকার হন। তারা পায়ে গুলি করে।
সেই ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন নেসার উদ্দিন মাঝি। তিনি বলেন, জলদস্যুদের দমনের কারণে এখন সাগরে নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারছেন জেলেরা।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। অপরাধ করে কোনো অপরাধী পার পাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরে আইনের আওতায় আনবে। তিনি বলেন, এক সময় সুন্দরবনে দস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। সেটা এখন আর নেই। যারা দস্যুতার সঙ্গে জড়িত তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে র্যাব কাজ করেছে, অভিযান চালিয়েছে। এই কাজের ফল হিসেবে আজকে আবারো বাঁশখালীতে দস্যুরা আত্মসমর্পণ করলো।
দস্যুদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আত্মসমপর্ণ করেছে তাদের বিষয়টি আমরা দেখবো। যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি তাদের বলবো তারা যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। নইলে দস্যুরা যেখানেই থাকুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরে আইনের আওতায় আনবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের অগ্রগতি বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলো। তাদের চক্রান্ত ভেস্তে গেছে। তাদের স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন জানান, দেশে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, সারা দেশে আজ উন্নয়ন হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলে উন্নয়নের গতি আরো বাড়বে। তাই যেকোনো মূল্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখা হবে।
পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সুন্দরবনে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। সেখানে কোনো দস্যুতা নেই। এতে সুন্দরবনের আশেপাশের প্রায় ২৫ লাখ লোক নির্বিঘ্নে বসবাস করছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটাচ্ছে তারা দেশের দুশমন। এদের রুখতে হবে। কোনো অপশক্তির স্থান বাংলাদেশে হবে না। এই চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি তার ফল এই এলাকার লোকজন পাবে। তিনি গণমাধ্যমে ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান।
র্যাবের অতিরিক্ত ডিজি কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, দস্যু দমন করতে গিয়ে র্যাবের অনেক সদস্য আহত হয়েছেন। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, মহেষখালীর সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। আত্মসমর্পণকারী গফুরের বোন সাজেদা বেগম জানান, ‘আমার ভাই আগে গাড়ি চালাতো। একজনের আশকারায় সে দস্যু হয়েছে। সারাদিন সাগরে দস্যুগিরি করতো। তার জন্য আমার পরিবারের মধ্যে কোনো শান্তি ছিল না। র্যাবের মাধ্যমে আমার ভাই আলোর পথে ফিরে এসেছে।’