সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা, জাপানের বিপক্ষে জার্মানির অঘটনে শুরুতেই জমে উঠে এবারের বিশ্বকাপ। তাই সবার চোখ ছিল লুসাইলে, ব্রাজিল-সার্বিয়া ম্যাচে।
র্যাঙ্কিং, পরিসংখ্যান, সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স, সবই ছিলো ব্রাজিলের পক্ষে। শেষ পাঁচ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে শেষ ১৫ ম্যাচের কোনটিতে হারেনি ব্রাজিল। তারপর বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে এবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে তারা। এবার ইউরোপিয়ান ক্লাব মৌসুম শুরুর পর থেকে বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত ব্রাজিলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রাই সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন। এমনকি এ সময় সবচেয়ে বেশি গোল করা খেলোয়াড়টিও ব্রাজিলের। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোব’ জানিয়েছে, এই দলের ফরোয়ার্ড মিলে ক্লাব ফুটবলে মোট ৭২ গোল করেছেন, যা বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাকি দেশগুলোর খেলোয়াড়দের সঙ্গে তুলনায় সর্বোচ্চ। সার্বিয়ার সঙ্গে শেষ দুই সাক্ষাতেও জয় ব্রাজিলের। যার মধ্যে গত বিশ্বকাপের জয়টিও ছিল ২-০ গোলের। তবে সবশেষ সাত ম্যাচের সবকটি জয়ের পথে প্রতিপক্ষের জালে ২৬ বার বল পাঠানো ব্রাজিল কাল শুরুতে ছিল একেবারেই এলোমেলো। ছন্দের অভাব ছিল স্পষ্ট। রক্ষণাত্মক সার্বিয়ার ওপর চাপ ধরে রাখলেও ব্রাজিলের প্রথম ২৫ মিনিটে খেলায় উল্লেখযোগ্য বলতে ছিল ভিনিসিউস জুনিয়রের দুই দফায় গতির ঝলক। অবশ্য সেবারও প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেওয়ার মতো কিছুই করতে পারেনি তারা। ২৭তম মিনিটে প্রথম নিশ্চিত সুযোগ পায় ব্রাজিল। ভিনিসিউসের উদ্দেশ্যে ডি-বক্সে দারুণ থ্রু বল বাড়ান থিয়াগো সিলভা, কিন্তু যথেষ্ট ক্ষিপ্র হতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। এগিয়ে এসে বল নিয়ন্ত্রণে নেন গোলরক্ষক ভানিয়া মিলিঙ্কোভিচ-সাভিচ। সাত মিনিট পর আরেকটি ভালো সুযোগ পায় ব্রাজিল। এবার লুকাস পাকেইতার পাস বক্সে পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর দুর্বল শট নেন রাফিনহা। ৪০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের একটি ব্যর্থ আক্রমণ রুখে পাল্টা আক্রমণ শাণায় ব্রাজিল। বল পায়ে বক্সে ঢুকে শেষ মুহূর্তে ডিফেন্ডার নিকোলা মিলেঙ্কোভিচের চ্যালেঞ্জে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি ভিনিসিউস। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর অন্য এক ব্রাজিলকে দেখতে পায় ফুটবল বিশ্ব। নান্দনিক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে ১১ মিনিটে দুই গোল করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন রিচার্লিসন। ৬২ মিনিটে ইংলিশ ক্লাব টটেনহামে খেলা এই ফরোয়ার্ড ভেঙে দেন সার্বিয়ান ডিফেন্স। আক্রমণটা তৈরি করেছিলেন নেইমার। তবে শট নেওয়ার জায়গা বের করার আগেই ফাঁকা পেয়ে দ্রুত শট নিয়ে নেন পাশে থাকা ভিনিসিউস। রিয়াল মাদ্রিদ তারকার প্রচেষ্টা সার্বিয়ান গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি শটে বল জালে জড়ান রিচার্লিসন। গোল খেয়ে কিছুটা আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করে সার্বিয়া। দুই একবার ব্রাজিল ডিফেন্সে হানাও দেয়। তবে সমতাসূচক গোলটি আসেনি। উল্টো বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সেরা মুহূর্তটি উপহার দিয়ে ব্রাজিলকে জোড়া গোলে এগিয়ে দেন রিচার্লিসন। ৭৩তম মিনিটের এই গোলটি ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতো। ম্যাচে দারুণ খেলা ভিনিসিউসের অসাধারণ এক পাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে গোল করে ব্রাজিলের জয় নিশ্চিত করেন টটেনহাম তারকা। ব্রাজিলের জার্সিতে ৩৯ ম্যাচে ১৯ গোল করেছেন রিচার্লিসন।
একটু পর কাসেমিরোর শট পোস্টে লেগে ফিরে আসলে তৃতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি ব্রাজিলের। তবে এই ম্যাচ দিয়ে ব্রাজিল যেন প্রতিপক্ষকে বার্তাও দিয়ে রাখলো। ‘জি’ গ্রুপে আগামী ২৮শে নভেম্বর স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে সেলেসাওরা। গতকাল গ্রুপের অন্য ম্যাচে ক্যামেরুনকে ১-০ গোলে হারিয়েছে সুইজারল্যান্ড।