২০ বছর মিথ্যা অভিযোগে কারাবাসে অবশেষে জাহিদ আপিলে খালাস পেয়েছেন
পরপর দুই আদালতে ফাঁসির রায় হওয়ার পর ভাইবোনেরা জেল থেকে জাহিদের জীবিত ফেরার আশা বাদই দিয়েছিলেন। খুলনার কারাগারে থাকার পরও গত ৯ বছরে কেউ খোঁজই নেয়নি তাঁর। এমন পরিস্থিতিতে বাইরের জগতের আলো দেখার আশাও বাদ দিয়েছিলেন তিনি। সেই শেখ জাহিদ (৪৮) জীবনের ২০টি বছর হারিয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় কারামুক্ত হয়েছেন। তবে এখন জীবনযাপনের অনিশ্চয়তা চেপে ধরেছে তাঁকে। তাঁর নেই কোনো থাকার জায়গা, উপার্জনের উপায়। এখন সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চান তিনি।
জেলে থাকা অবস্থায় মা–বাবাকে হারান জাহিদ। নিজের বাড়ির সম্পত্তি বলতে যা ছিল, প্রথম দিকে তা মামলার খরচ চালাতেই চলে গেছে। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি সোমবার রাতে ছিলেন খুলনা নগরের বাগমারা এলাকায় বড় ভাইয়ের বাড়িতে। তাঁরও আর্থিক অবস্থা নাজুক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের দোলখোলায় কথা হয় জাহিদের সঙ্গে। সেখানে ছোট বোনের বাড়িতে দুপুরে খাওয়ার কথা তাঁর। দীর্ঘ বছর কনডেম সেলে কাটানোর পর বাইরে এসে খেই হারিয়ে ফেলছেন জাহিদ। তিনি বলেন, ‘নিজের বলতে এখন আর কিছুই নেই। ভাইবোনদের আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ। এখন কোথায় থাকব, কী করব, তা নিয়েই নতুন দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। সরকার যদি কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে তা নিয়েই বেঁচে থাকব।’
স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার অভিযোগেই ফাঁসির রায় হয়েছিল জাহিদের। গতকাল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জাহিদ বলেন, ১৯৯৪ সালে বিয়ে করে বাগেরহাটের ফকিরহাটে শ্বশুরবাড়ির পাশেই ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। তাঁর একটি মেয়েও হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি যশোরে গিয়ে রাতে আর ফিরতে পারেননি। ওই রাতেই তাঁর স্ত্রী ও কন্যা খুন হন। পরদিন তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন শ্বশুর।
২০০০ সালের শুরুর দিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জাহিদ। ওই বছরই বাগেরহাটের আদালত তাঁর ফাঁসির আদেশ দেন। উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হলে ২০০৪ সালে সেখানেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। কারাগার থেকেই ২০০৪ সালে আপিল বিভাগে জেল পিটিশন করেন জাহিদ, যা ২০০৭ সালে জেল আপিল হিসেবে গণ্য হয়। গত মাসে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগে ওই জেল আপিলের শুনানি হয়। শুনানিতে আদালত মামলায় নানা অসংগতি পান। শুনানি শেষে গত ২৫ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ জাহিদকে খালাস দেন।
খুলনার জেল সুপার ওমর ফারুক বলেন, জাহিদ কনডেম সেলে থাকার পর তাঁর পরিবার থেকে মামলাটি পরিচালনা করা হতো না বলে তাঁকে জানানো হয়। এরপর তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি জেলার ফখরুদ্দিনকে বিষয়টি দেখভালের জন্য বলা হয়। এ কাজে ঢাকার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন। অবশেষে জাহিদ আপিলে খালাস পেয়েছেন।