১৪৪ ধারা , পুলিশের লাঠিচার্জ: সংঘাত ছাড়াই বরিশালে জোট-মহাজোটের শক্তি পরীক্ষা
খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ কোন প্রকার সংঘাত ছাড়াই গতকাল শুক্রবার বরিশালে শক্তি পরীক্ষা করেছেন জোট-মহাজোটের নেতা-কর্মীরা। এরমধ্যে আকস্মিক ভাবে জেলার গৌরনদীতে ১৪৪ ধারা ও আগৈলঝাড়ায় মিছিলে মৃদু লাঠিচার্জ করেছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা অবশেষে আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে নিস্ফল হয়েছে। এজন্য সাধারন নাগরিকেরা আইন শৃংখলা বাহিনীর সকল সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার নগরীতে কড়া পুলিশী বেষ্টনিতে ১৪৪ ধারার মধ্যে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১ টায় জেলখানার মোড়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অনুষ্ঠিত সমাবেশে জোটের সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি বলেন, জনগনের বাকরুদ্ধ করে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা যায় না। সংবিধান কোন কোরআন শরীফ নয়, যে তাকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা যাবেনা। আলোচনার ক্ষেত্রে এখনো সময় আছে, আলোচনার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহনে নির্বাচন না হলে এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও তিনি হুশিয়ারী উচ্চারন করেন। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিটি মেয়র আহসান হাবীব কামাল, উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ-এমপি, সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মহানগর জামায়াতের আমীর মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, ইসলামী ঐক্যজোটের আবুল কোসেম মোঃ শাহজাহান, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান শাহিন, সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, বিএনপি নেতা এবায়দুল হক চাঁন, আনোয়ারুল হক তারিন প্রমুখ। বিক্ষোভ চলাকালে তিনদিক থেকে পুলিশ সমাবেশস্থল ঘিরে রাখে। সমাবেশ শেষে পৌনে ১২ টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে অমৃত লাল দে সড়ক ও বিএম কলেজ সড়ক অতিক্রম করে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে প্রবেশকালে পুলিশ বাঁধা দেয়। সেখানেই মিছিলের সমাপ্তি ঘটে।
এদিকে একই সময়ে নগরীর সোহেল চত্বরস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সমাবেশ না করার ব্যাপারে হিরণ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মহানগর পুলিশ ১৪৪ ধারা জারির একটিপত্র পৌঁছে দেয়ার কারনে তারা শৃংখলা ভঙ্গ করেননি। তবে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির সমাবেশ ও মিছিলের পর পরই নগরীতে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতা-কর্মীরা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদের সম্মুখসহ গুরুতপূর্ণ স্থানে অবস্থান করায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে নগরীতে ১৪৪ ধারা জারি করার পর নগর জুড়ে সর্বত্রই ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। নগরীর গুরুত্বপূর্ন স্থান ছাড়াও টহল পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। সংঘাত ও ১৪৪ ধারার কারনে জনমনে আতংক সৃষ্টি হওয়ায় তেমন কোন মানুষ রাস্তাঘাটে ছিলো না। হাতে গোনা কিছু যানবাহন চলাচল করলেও বিপনী বিতানসহ সিংহভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিলো বন্ধ। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল ও সমাবেশের ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) সোয়েব আহমেদ জানান, বিএনপিকে গভীর রাতে শর্ত সাপেক্ষে মিছিল-মিটিংয়ের মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। সে শর্ত অনুযায়ীই তারা কর্মসূচী পালন করায় বাঁধা দেয়া হয়নি। কোন অপ্রতিকর ঘটনাও ঘটেনি। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
১৪৪ ধারা জারি ॥ এদিকে সড়ক পথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বরিশালের গৌরনদীতে গতকাল শুক্রবার সকালে আকস্মিক ভাবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকার ঘোষণা দিয়ে সকালে ব্যাপক মাইকিং করা হয়। ফলে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডে বেলা এগারোটায় আওয়ামীলীগ সমর্থিত মহাজোটের আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী জানান, গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের জন্য অনুমতি নিলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনুমতি না নিয়েই বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিয়েছিলো। তারা এখবর জানতে পেরে শান্তি শৃংখলা ও জানমাল রক্ষায় গৌরনদীতে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
পুলিশের লাঠিচার্জ ॥ আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আফজাল হোসেন শিকদার অভিযোগ করেন, শুক্রবার বেলা একটার দিকে তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এতে তাদের মিছিলটি পন্ড হয়ে যায়। লাঠিচার্জে আহত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান, বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক এস.এম মনির-উজ জামান মনির, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি কবীর হোসেন তালুকদার, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আলী হোসেন ভূঁইয়া স্বপনসহ কমপক্ষে ২০ জন। লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, অনুমতি না নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করায় পুলিশ মিছিলে বাঁধা দিয়েছে নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
আ’লীগের দখলে রাজপথ ॥ এদিকে গতকাল শুক্রবার দিনভর বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদী থেকে বরিশাল নগরী পর্যন্ত পুরো রাজপথ ছিলো আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট নেতা-কর্মীদের দখলে। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ হারিছুর রহমান জানান, কেউ যাতে রাজপথে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নেতা-কর্মীরা দিনভর রাজপথেই ছিলো। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের গৌরনদী উপজেলা শাখার আহবায়ক সৈকত গুহ পিকলু জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি নিয়ে রাজথে অবস্থানের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্যের কবল থেকে জানমাল রক্ষা করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, স্বাধীনতার শত্র“দের বরিশালের রাজপথে নামতে দেয়া হবেনা। তা জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।