১০০ বছরের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদ স্পিকার নির্বাচনে ব্যর্থ হলো রিপাবলিকানরা।

05/01/2023 1:12 pmViews: 3

mzamin

মার্কিন কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদের নতুন স্পিকার নির্বাচন নিয়ে উচ্চ মাত্রার নাটকীয়তা। তৃতীয়বারের মতো এই পদে নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হলেন রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি। ১০০ বছরের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদ স্পিকার নির্বাচনে ব্যর্থ হলো রিপাবলিকানরা। ১৯২৩ সালের পর মঙ্গলবার রাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এ অবস্থায় ওই রাতেই প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন মূলতবি হয়ে যায়। এই ভোটে রিপাবলিকান দলের ভিতরে বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ম্যাকার্থিকে পছন্দ না হওয়ায় দলের ভিতর থেকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয় তাকে। প্রার্থী করা হয় জিম জর্ডানকে। কিন্তু জিম জর্ডান সমর্থন দেন ম্যাকার্থিকে। তা সত্ত্বেও ভোটে ২০ জন রিপাবলিকান ভোট দেন জিম জর্ডানকে।

নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পায় রিপাবলিকান পার্টি। ফলে ধরে নেয়া হয়েছিল যে, তাদের প্রার্থী ম্যাকার্থিই স্পিকার হিসেবে বিজয়ী হবেন। পক্ষান্তরে নিজ দলের ভিতরেই নিজের সম মর্যাদার র‌্যাংকের ভিতর থেকে বিদ্রোহের শিকার হয়েছেন তিনি এবং ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার এই কংগ্রেসম্যান এ পর্যন্ত টানা তিনবার স্পিকার পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। বুধবার আবার অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। এদিন কি ঘটবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছিল না। তার পরিণতি কি হবে, তাও স্থির নয়। তবে কেউ একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত এই ধারা চলতেই থাকবে।

যদি ম্যাকার্থি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার কোনো পথ পেয়ে যান, তাহলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেনÑ বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ আছে দুই বছর। এই সময়ে প্রতিনিধি পরিষদের ভিতরে মধ্যপন্থি ও ডানপন্থি রিপাবলিকানরা অশান্ত সময় পাড় করবেন। তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। আবার রিপাবলিকানরা যদি কংগ্রেসের এই নিম্নকক্ষ কার্যকরভাবে চালাতে না পারে, তাহলে ব্যয় বিষয়ক বিল, ঋণের বিষয়সহ মৌলিক কিছু কার্যক্রম পরিচালনায় হোঁচট খেতে পারে। নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পায় রিপাবলিকানরা। ফলে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার জন্য অল্প কিছু ভোটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কট্টরপন্থি রক্ষণশীলদের একটি গ্রুপ তার মনোনয়নের বিরুদ্ধে একত্রিত হন। রিপাবলিকান পর্যবেক্ষকদের মতে, দলের ভিতর এই ফাটল দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
মঙ্গলবারের ভোট নিয়ে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান একজন লবিস্ট। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে চান না। তিনি বলেছেন, কিছু সময় ধরে ককাসের সুনির্দিষ্ট একটি অংশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করেননি কেভিন ম্যাকার্থি। তিনি উল্টো প্রচুর শত্রু সৃষ্টি করেছেন। রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত কারণে তাকে পছন্দ করেন না এমন অনেক মানুষ আছেন।

স্পিকার নির্বাচিত হতে তার দলের বিরোধীদের ছাড় দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে সমঝোতা করেছিলেন কেভিন ম্যাকার্থি। তাকে দলীয় এই বিরোধীরা দেখে থাকেন অতিমাত্রায় মূলধারার এবং ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত হিসেবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এক পর্যায়ে তিনি তাদের সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদের আইন পরিবর্তনে রাজি হয়েছিলেন, যাতে সহজেই একজন ক্ষমতাসীন স্পিকারকে উৎখাত করা যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি তার বিরোধীদের হাতে চেক অব পাওয়ারের প্রচুর সুযোগ তুলে দিতে চেয়েছিলেন। রিপাবলিকান ওই লবিস্ট বলেন, রিপাবলিকানদের সঙ্গে তার এই সমঝোতা থেকেই ফুটে ওঠে যে, তিনি ক্ষমতা পেতে কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এতে তার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।

রিপাবলিকান প্রার্থী কেডিন ম্যাকার্থির এই ব্যর্থতায় প্রতিনিধি পরিষদে উৎফুল্ল বিরোধী শিবির ডেমোক্রেটরা। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২১৮ ভোট পেতে হয়। টানা তৃতীয়বারের মতো সেই ভোট পেতে ব্যর্থ হন তিনি। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আসন আছে ২২২টি। এর মধ্যে ১৯টি আসন আছে কট্টর ডানপন্থিদের দখলে। তারা কেভিন ম্যাকার্থির ঘোর বিরোধী। তার আদর্শ ও ব্যক্তিগত জীবনের বিরোধী। তাদেরকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে প্রতিনিধি পরিষদের ভার্জিনিয়ার সদস্য বব গুড কখনো নত হবেন বলে মনে হয় না। পক্ষান্তরে মঙ্গলবারের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তে তারা এমনকি কেভিন ম্যাকার্থিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মনোনয়ন দিয়ে দেন জিম জর্ডানকে। ম্যাকার্থিকে স্পিকার হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন ম্যাকার্থিকে। এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে মনোনয়ন দেয় দলীয় বিরোধী শিবির।

জিম জর্ডান কট্টর-ডানপন্থি ফ্রিডম ককাসের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা। তিনি তৃতীয় রাউন্ডের ভোটে ম্যাকার্থিকে ভেটে দেয়ার জন্য রিপাবলিকানদের প্রতি অনুরোধ করেন। তা সত্ত্বেও ২০ জন রিপাবলিকান ভোট দেন জর্ডানকে। ফলে ম্যাকার্থি আরও একবার বিজয়ী হতে পারেননি। অন্যদিকে ডেমোক্রেটরা তাদের দলের নতুন নেতা নিউ ইয়র্কের রিপ্রেজেন্টেটিভ হাকিম জেফ্রিসের পক্ষে একাট্টা আছেন। এ অবস্থায় কিভাবে পরিস্থিতির ইতি ঘটানো যায় তা নিয়ে নানা রকম তত্ত্ব আড়াচ্ছে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

Leave a Reply