“হিরু চৌকিদারও হতে পারবে না চরমোনাই পীরের অভিশাপ”
প্রেমানন্দ ঘরামী, বরিশাল ॥ “হিরু আর কোনদিন একজন চৌকিদারও (গ্রামপুলিশ) হতে পারবেনা”। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে আওয়ামী লীগ ও পরে বিএনপিতে যোগদানের পর একটি জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এমনটাই অভিশাপ দিয়েছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমীর চরমোনাইর পীর সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল করীম। তার মৃত্যুর পর পূর্ণরায় দলে ফিরে আসেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার হিরু। যার ওপর চরমোনাইর মরহুম পীরের অভিশাপ, বরগুনা-২ আসনের উপ-নির্বাচনে তাকেই পূর্ণরায় পীরের দল থেকে মনোনয়ন দেয়ায় সাধারন ভোটারদের মধ্যে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রমতে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী গোলাম সরোয়ার হিরু প্রথমে চরমোনাই পীরের দলথেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় তাদের সমর্থন দেন। এনিয়ে পীরের দল আর নেতা-কর্মীদের সাথে তার দূরত্ব বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের আমলের ১৫ ফেব্র“য়ারির বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে হিরু ধানের শীষের প্রার্থী হন। ওইসময় চরমোনাইর পীর সৈয়দ মোহাম্মদ ফজলুল করীম পাথরঘাটা উপজেলার খাসকাচারী মাঠের একটি জনসভায় হিরুকে অভিশাপ দিয়ে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, হিরু আর কোনদিন একজন চৌকিদারও (গ্রামপুলিশ) হতে পারবেনা। পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের সময় হিরু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি মাথার ওপরে ঝুঁলিয়ে রাতারাতি আওয়ামী লীগ বনে গিয়েও মনোনয়ন বঞ্চিত হন।
সূত্রে আরো জানা গেছে, বরগুনা-২ আসনের উপনির্বাচন আগামীকাল ৩ অক্টোবর। এ আসনে কে হবেন স্বল্প সময়ের জন্য সংসদ সদস্য, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে শেষ মুহুর্তের হিসেব নিকেশ। এখানে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোটের প্রার্থী শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী গোলাম সরোয়ার হিরু’র মধ্যে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন আব্দুস সোবাহান।
সাধারন ভোটারদের মতে, হিরুর কাছে দল মতের কোন বালাই নেই। সে যখন যেখানে সুবিধা পান তখন সেখানেই তিনি প্রার্থী হন। ফলশ্র“তিতে এবার উপ-নির্বাচনে তিনি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হয়েছেন। সেক্ষেত্রে তিনি চরমোনাই পীরের মুরীদদের পাশাপাশি গোপনে বিএনপি-জামায়াতের ভোট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এজন্য তিনি ও তার সমর্থকেরা নির্বাচনের একেবারে শেষসময়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ন্যায় এখানেও মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে হেফাজত ইস্যু নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছেন। মহাজোটের প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলতেই ধর্মীয় রাজনীতি শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। পুরো অপপ্রচারকেই নির্বাচনী এলাকা পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগীর সাধারন ভোটাররা প্রত্যাখান করেছেন। ভোটারদের মতে, নিয়ম রক্ষার এ উপ-নির্বাচনে বিজয়ের পর পূর্ণরায় দশম সংসদ নির্বাচনেও রিমনকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তারা দেখতে চান। এখানে দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামীলীগের মধ্যে দলীয় কোন্দলে চলে আসলেও নির্বাচনকে ঘিরে নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়ে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখানে দু’প্রার্থীর মধ্যেই তুমুল লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে।
স্থানীয় বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে হিরুর পক্ষে শিবিরের একটি বিশেষ টিম ওই এলাকায় নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটাতে অবস্থান করছে। উল্লেখ্য, বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা ও বেতাগী) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৩জন। সূত্রমতে, এ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলু গত ২৬ জুলাই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ফলে শূণ্য আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।