হাসিনা-খালেদাকে ফের যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পৃথক দুটি চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেন্দেজ। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন ও রাজপথে সংঘাত বন্ধ করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ভাঙন ধরাবে বলেও উল্লেখ করেছেন এই সিনেটর। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের শ্রমিকদের পরিস্থিতির উন্নয়নে উভয় নেত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষারও আহ্বান জানিয়েছেন রবার্ট মেনেন্দেজ।
শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে সম্বোধন করে ৮ জানুয়ারি লেখা চিঠি দুটোর বিষয়বস্তু একই। শুধু সম্বোধন ও ঠিকানায় রয়েছে ভিন্নতা। ছয় প্যারার চিঠিতে লেখা আছে, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় আমার উদ্বেগের কথা জানাতে ও আপনার প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাতেই লিখছি আমি। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। ভবিষ্যৎ নেতৃবৃন্দকে নির্বাচিত করতে পারে, এমন একটি স্থায়ী, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য। আমি নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচনের দিন সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। কোনো পরিস্থিতিতেই সহিংসতা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির গ্রহণযোগ্য ও বৈধ বহিঃপ্রকাশ নয়। রাস্তায় সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ হতে হবে এবং দলগুলোর শান্তিপূর্ণভাবে মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলারের বেশি। মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ আছে। তবে অর্থনীতির ওপর চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার গুরুতর প্রভাব আছে এবং এটি ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে তুলবে। ক্রমেই তলানির দিকে নিয়ে যাওয়া এ পরিস্থিতির অবসানের জন্য আমি আপনাকে একটি নতুন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। রবার্ট মেনেন্দেজ চিঠিতে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক আগে কখনোই এতটা জোরালো ছিল না এবং অভিন্ন অনেক বিষয়ে এ অংশীদারিত্ব ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সহিংসতা দুই দেশের অভিন্ন অর্জনকে বিশেষভাবে হুমকিতে ফেলছে। এ কারণে সন্ত্রাসবাদ ও পাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোসহ দুই দেশের বিস্তৃত সম্পর্কের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশে শ্রমমানের উন্নয়নেও আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। অগি্নকাণ্ড ও ভবন নিরাপত্তা ইস্যুতে কিছু অগ্রগতিও হয়েছে, তবে অনেক কিছুই এখনো বাকি আছে। যদিও শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের বিষয়ে আমার এখনো গভীর উদ্বেগ আছে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে আপনি আমার অবস্থানকে সমর্থন করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ সময়েও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকারের বিষয়ে জিএসপির কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবেন। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আত্দবিশ্বাস বাড়াবে। চিঠির শেষ প্যারায় মেনেন্দেজ লিখেছেন, বিশ্ব বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করছে। গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় সমর্থক হিসেবে আমি নতুন করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে অগ্রসর হতে আলোচনা শুরু ও সংঘাত বন্ধের জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি।