হাসিনার ফোন খালেদার শর্ত
০ সোমবার সংলাপ ও নৈশভোজের জন্য গণভবনে খালেদাকে আমন্ত্রণ ০ প্রধানমন্ত্রীর হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান, খালেদার না
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট আর দেশবাসীর উৎকণ্ঠার মধ্যেই টেলিফোনে একে অপরের সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। টেলিফোন করা নিয়ে দিনভর নানা নাটকীয়তার পর সন্ধ্যায় দু’নেত্রীর মধ্যে কাক্সিক্ষত টেলিসংলাপে ‘সমঝোতার’ নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আভাস স্পষ্ট। প্রায় ৩৭ মিনিট দীর্ঘ টেলিসংলাপে প্রধানমন্ত্রী হরতাল প্রত্যাহার করে আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় ‘গণভবনে’ সংলাপে বসার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জবাবে তিন দিনের হরতাল কর্মসূচী শেষ হলেই ‘শর্তসাপেক্ষে’ সংলাপে বসতে তিনি প্রস্তুত জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, দু’জনের (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) প্রস্তাব সমন্বয় করে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী টেলিসংলাপের মাধ্যমে দেশ ও জাতির স্বার্থে হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার করে তাঁর সঙ্গে গণভবনে সংলাপে বসার আহ্বান জানান। হরতাল ও জ্বালাও-পোড়াও বাদ দিয়ে যতজন খুশি সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে আসুন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলি। জবাবে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে সংলাপে বসার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এ বিষয়ে যদি নীতিগতভাবে আপনি সম্মত হন, তাহলেই কেবল আলোচনা হবে।
দুই নেত্রীর মধ্যে টেলিসংলাপের পর সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, স্বউদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতার কাছে টেলিফোন করে সমস্যা সমাধানে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে নৈশভোজের দাওয়াত দিয়েছেন খালেদা জিয়াকে। খালেদা জিয়া দাওয়াত গ্রহণ করেছেন কি না জানতে চাইলে আশরাফ জানান, তিনি (খালেদা জিয়া) প্রত্যাখ্যান করেননি। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়া প্রস্তাব গ্রহণ করবেন এবং গণভবনে আসবেন। খালেদা জিয়ার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাই এখন আর হরতালের কোন প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বাসভবনে আয়োজিত তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দলের নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও ঘোষিত হরতাল কর্মসূচী পালনে অনড় রয়েছেন খালেদা জিয়া। ২৯ অক্টোবর তিন দিনের হরতাল কর্মসূচী শেষ হওয়ার পর খালেদা জিয়া সংলাপে বসতে প্রস্তুত আছেন। এ সময় বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে যদি নীতিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মত হন, তাহলেই কেবল আলোচনা হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানোর পরও হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাঁদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দুঃখ পেয়েছেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী নৈশভোজের আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন, হরতাল প্রত্যাহার করবেন।
এদিকে সরকারকে ৩৬ ঘণ্টার সময় দেয়ার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সমঝোতার উদ্যোগ নেয়ার পরও হরতাল প্রত্যাহার না করা এবং সংলাপের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার পূর্বশর্তারোপ নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারকে ৩৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, এর মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ না নিলে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচী পালন করা হবে। ৩৬ ঘণ্টার আল্টিমেটামের মধ্যে ১২ ঘণ্টা না যেতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে সরাসরি টেলিফোন করে সমঝোতার উদ্যোগ নেন এবং সংলাপে বসার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও জানান। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তাঁর বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
তবে খালেদা জিয়া নিজের দেয়া আল্টিমেটামের শর্ত নিজেই ভেঙ্গে তিন দিনের হরতাল শেষেই শর্তসাপেক্ষে সংলাপে বসার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেন। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণের পরও বিরোধীদলীয় নেত্রীর হরতাল প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্ত ‘দুঃখজনক।’ দেশের সব-শ্রেণী পেশার মানুষের পাশাপাশি কূটনীতিক মহলও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সংলাপের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার শর্ত জুড়ে দেয়ায় ‘সংলাপ বা সমঝোতা’র ক্ষেত্রে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করবে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে শনিবার দুপুর থেকেই বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর সোয়া একটা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার অফিস ও বাসার ‘রেড টেলিফোনে’ কয়েকদফা ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রিসিভ না করায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। পরে সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় দফায় মোবাইলে টেলিফোন করলে রিসিভ করেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। টেলিফোনে দুই শীর্ষ নেত্রীর মধ্যে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দীর্ঘ কয়েক মিনিট কথা হয়। দুই নেত্রীর কাক্সিক্ষত ফোনালাপের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দু’দলের মধ্যে সংলাপ হবে কি না, তা দেখার জন্য এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় পুরো দেশবাসী।
মাহেন্দ্রক্ষণ সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট ॥ কখন দুই নেত্রীর মধ্যে টেলিসংলাপ হবে, সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দুপুর থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন গোটা দেশবাসী। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ফোন দেন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য গুলশানের বাসাতেই দলের নেতাদের নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন খালেদা জিয়া। প্রথমেই দুই নেত্রীর মধ্যে চলে সালাম ও কুশল বিনিময়। একে অপরের শারীরিক অবস্থারও খোঁজখবর নেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। প্রথম ৫ মিনিট সাংবাদিকদের সামনেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে কথা বললেও পরে সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে তিনি প্রায় ৩৭ মিনিট কথা বলেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘দুপুরে টেলিফোন করে আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। আমি রেড টেলিফোন থেকে নিজের হাতে ফোন করেছি। বার বার রিং হয়েছে। আমি দুঃখিত যে আপনি ধরতে পারেননি। ফোন ডেড, নাকি ডেড করে রাখা হয়েছে, বলতে পারছি না। আগামীকাল আমি দেখব। তিনি বলেন, ২৮ তারিখ রাতে খাওয়ার জন্য আপনাকে দাওয়াত করছি। যতজন খুশি নিয়ে আসতে পারেন। আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি আগামী নির্বাচন সম্পর্কে গণভবনে আসার জন্য।
নির্বাচনের আগে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ইতোমধ্যেই অন্যদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি, তা আপনি জানেন। আপনি হরতাল প্রত্যাহার করে নেন। দেশ ও জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে, জ্বালাও-পোড়াও বাদ দিয়ে গণভবনে আসুন, আমরা কথা বলি। প্রধানমন্ত্রীর এমন অনুরোধের জবাবে টেলিফোনের অপরপ্রান্তে থাকা বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ঠিক কী বলেছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিসংলাপের সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়াও দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচটিইমাম, ড. মশিউর রহমান, কাজী জাফরউল্যাহ, মাহবুবউল আলম হানিফসহ দলটির অন্য নেতারা। আর বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তাঁর উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।
দুপুরে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বিরোধী দলের নেতার বাসা ও অফিসের রেড টেলিফোনে করেও সাড়া না পাওয়ার পর কে কল করবেন, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দেয়। দুপুরে বিরোধী দলের নেতাকে ফোনে না পাওয়ার কথা জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ জানান, এখন তিনি (বিরোধীদলীয় নেতা) কল ব্যাক করবেন। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর এডিসির ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা ৬টায় বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোন করবেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন করা নিয়ে শিমুল বিশ্বাসসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। কখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতার টেলিসংলাপ হবে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে তাঁরা আলোচনা করেন। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর এডিসি পুনরায় বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাসকে ফোন করেন।
এ বিষয়ে শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর এডিসি তাঁকে জানান যে, বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে চাচ্ছেন। আমি বিষয়টি বিরোধীদলীয় নেত্রীকে জানিয়েছি। উনাকে (প্রধানমন্ত্রীর এডিসি) বলা হয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা রাত ৮টায় গুলশানের কার্যালয়ে আসবেন, ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনের অপেক্ষায় থাকবেন খালেদা জিয়া। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ৬টার আগে কথা বলতে চান বলে বিরোধীদলীয় নেতাকে জানানো হয় এবং টেলিসংলাপের সময় সন্ধ্যা ৬টায় ঠিক হয়। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় দুই নেত্রীর মধ্যে দীর্ঘ ফোনালাপ।
বিরোধী দলের নেতার দুটি রেডফোন নিয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত একান্ত সচিব সালেহ আহমেদের বরাত দিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য সায়রুল কবীর খান সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার দুটি রেডফোনই শনিবার বন্ধ ছিল। তিনি জানান, জাতীয় সংসদে ও বাড়িতে থাকা দুটি রেডফোনের মধ্যে বাড়ির ফোনটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন অনেকদিন ধরেই। আর শনিবার সংসদের রেডফোনটি বন্ধ ছিল। বিএনপির নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, দুটি রেডফোন বন্ধ থাকায় প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করেও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।
প্রেস বিফিংয়ে সৈয়দ আশরাফ ও মারুফ কামাল যা বলেন ॥ ফোনালাপ শেষে গণভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী দিন আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে স্বউদ্যোগে ৩৭ মিনিট কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী সমস্যা সমাধানে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। যে কোন বিষয়ে আলোচনার দুয়ার খোলা আছে। জাতি আশা করেছিল, দুই নেত্রী কথা বলবেন এবং সঙ্কটের নিরসন হবে।
আলোচনার বিষয়বস্তু কী হবে জানতে চাইলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, আলোচনা শুরু হবে, দুই নেত্রী আলোচনা শুরু করবেন। আমরা থাকতেও পারি (আলোচনায়), নাও পারি। দুই নেত্রী ঠিক করবেন। তাঁদের সূচনা আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এখন আর হরতালের প্রয়োজন নেই। যেখানে আলোচনা আছে, সেখানে হরতালের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, ‘উনি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেননি। আমাদের বিশ্বাস, উনি (খালেদা জিয়া) আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন। আমাদের জানা মতে, উনাদের মধ্যে নেতিবাচক কথা হয়নি। আমার বিশ্বাস, উনারা আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন, ২৮ তারিখ গণভবনে আসবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোন বিষয়ে আলোচনায় উঠে আসতে পারে। এটি আলোচনার প্রাথমিক পর্যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২২ অক্টোবর বিরোধী দলের মহাসচিব চিঠি দিয়ে সংলাপ শুরু আহ্বান জানান। সেই চিঠির কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি হস্তান্তর করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার আল্টিমেটামের আগে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখন আর হরতালের প্রয়োজন নেই আশাকরি। আশরাফ বলেন, আশা করি খালেদা জিয়া প্রস্তাব গ্রহণ করবেন এবং গণভবনে আসবেন। ১৮ দলের অন্য শরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ হয়েছে এবং তাঁকে ও তাঁর দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা শেষ হওয়ার পর সেখানে আয়োজিত তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিরোধী দলের নেতার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, অতীতে আমরা আপনাদের অনেকবার সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনারা মানেননি। আপনি জামায়াতের দেয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব ছাড়া আর কিছু মেনে নেননি। তবে অতীতের কথা বলে তিক্ততা সৃষ্টি করব না। কারণ আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতা চাই। আপনারা একটা প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরাও একটি প্রস্তাব দিয়েছি। তবে দু’জনের প্রস্তাব সমন্বয় করে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।
মারুফ কামাল আরও জানান, আলাপে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ ও হরতাল প্রত্যাহারের ব্যাপারে বলেছেন, হরতাল বহাল থাকবে। ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত হরতাল চলবে। এর পর যে কোন ধরনের আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, আপনারা হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার করে ২৮ অক্টোবর আলোচনার জন্য গণভবনে আসুন। তখন খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে যদি নীতিগতভাবে আপনি সম্মত হন, তাহলেই কেবল আলোচনা হবে।
মারুফ কামাল জানান, ১৮ দলের হরতাল কর্মসূচীর বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি (শেখ হাসিনা) যদি গতকালও (শুক্রবার) আমাকে ফোন করতেন, তাহলে কর্মসূচী প্রত্যাহারের বিষয়ে আমি জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতাম। আজকে (শনিবার) হরতালের আগের রাত ১৮ দলীয় জোট নেতাদের পুলিশ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এখন তাদের একত্রিত করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। তাই ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় হরতাল কর্মসূচী শেষে যে কোন সময় আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানালে প্রয়োজনীয় লোকদের নিয়ে যেতে প্রস্তুত আছি।
পরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রেস ব্রিফিং করে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানোর পরও বিরোধী দল হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাহার না করায় উ™ে^গ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি হতাশাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে টেলিফোনে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সুতরাং এখন আর হরতালের প্রয়োজন আছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, একজন শীর্ষ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী আরেকজন শীর্ষ নেত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখন আমন্ত্রণ গ্রহণ না করার বিষয়টি বিরোধীদলীয় নেত্রীর ওপর নির্ভর করছে। তবে আমরা আশা করি দুই নেত্রীর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিরাজমান সব সমস্যার সমাধান হবে।
চার বছর পর দুই নেত্রীর মধ্যে কথোপকথন ॥ সর্বশেষ ২০০৯ সালের নবেম্বর মাসে সেনাকুঞ্জের এক অনুষ্ঠানে দেখা হলে দুই নেত্রী নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় করেছিলেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে তখন কুশল বিনিময় ছাড়াও বিশেষ কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থার সময়ের স্মৃতিচারণ করেন তাঁরা। একই বছরের মে মাসে শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানমন্ডির সুধাসদনে যান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং পরে দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে চারটি বছর। এর মধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠানে তাঁদের মধ্যে দেখা হলেও কথা হয়নি দুই নেত্রীর মধ্যে। চার বছর পর শনিবার এলো আবার সেই বিশেষ মুহূর্ত। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যেই দুই নেত্রী টেলিফোনে প্রায় ৩৭ মিনিট কথা বলেন। আগামীকাল সোমবার বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। হরতাল প্রত্যাহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থে সংলাপে বসার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বিরোধীদলীয় নেত্রী সাড়া দেবেন- এমনটাই প্রত্যাশা এ দেশের সব-শ্রেণী পেশার মানুষের।