হাসিনার পথেই হাঁটছেন খালেদা
দুলাল আহমদ চৌধুরী : শেখ হাসিনার পথেই হাঁটছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় ছিলেন শেখ হাসিনা। কোনো সংলাপ মধ্যস্থতায় তখন কাজ হয়নি। ফলে বিএনপিকে আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচন করতে হয়েছে। এবার ঠিক একই অবস্থান নিয়েছেন খালেদা জিয়া। নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে তিনি এক চুলও নড়বেন না। শেখ হাসিনাবিহীন সরকার ছাড়া তিনি নির্বাচনের পথে পা মাড়াবেন না। নির্বাচন ঠেকাতে না পারলেও আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। তার বিশ্বাস, একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার বেশিদিন টিকতে পারবে না।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব আস্থায় আনছে না বিএনপি। ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে যে কোনো মূল্যে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। পেশাজীবী সম্মেলনের অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপি নেতারা মনে করছেন চাপ সৃষ্টি করলে সমাবেশ করার অনুমতি দিতেও বাধ্য হবে সরকার। খালেদা জিয়াও এই মুহূর্তে সমঝোতার আলোচনার চেয়ে আন্দোলনেই বেশি আগ্রহী। বিএনপি নেতাদের মতে, সরকার বিরোধী দলকে ঠেকাতে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তাতে হয়তো সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে। এজন্য এই মুহূর্তে পাল্টা কোনো প্রস্তাব না দিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবিতেই অনড় থাকবে বিএনপি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকার গঠনে বিএনপিকে তাদের দলীয় এমপিদের মধ্য থেকে নাম দিতে বলেছেন। আলোচনা করতে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদককে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। আলোচনার জন্য চিঠির দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, সরকার যতই নমনীয় হবে বিরোধী দল ততই কঠোর হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিএনপি। বিএনপি চেয়েছিল সরকারের প্রস্তাবকে গ্রহণ করে একটি পাল্টা প্রস্তাব দিতে। এরপর আলোচনা করে সমঝোতা করবে। কিন্তু ক্রমশই সেই পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপির নেতারা। তাদের মতে, প্রস্তাবের দুই দিনের মধ্যে বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি ও অফিসের সামনে অধিক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। এমনকি গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন তার বাড়িতে যায় তখন খবর রটে যায় বেগম খালেদা জিয়াকে হাউস অ্যারেস্ট করা হবে। ২৫ অক্টোবর সমাবেশ করার অবস্থান থেকে সরে আসতে খালেদা জিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সূত্রমতে, ২৫ অক্টোবর কী কর্মসূচি দেয়া হবে তাও ঠিক করেছেন খালেদা জিয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে অনুমতি না মিললেও তিনি যে কোনো মূল্যে ২৫ অক্টোবরের সমাবেশ করতে চাইছেন তিনি। সেখানেই কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সরকার তাদের বাধা দিলে তারা তা প্রতিহত করবেন।
এদিকে বিএনপির এক নেতা বলেছেন, সরকার বিএনপিকে সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়ে ২৫ অক্টোবর সমাবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। এটা তাদের অপকৌশল। কিন্তু সরকার মনে করেছিল বিএনপিকে এ প্রস্তাব দিলে বিএনপি তা লুফে নেবে। কিন্তু বিএনপি তা নেয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়াও দেয়নি। আর প্রতিক্রিয়া না দেয়ার কারণে সরকার অনেকটা উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। ডিএমপি সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পরও গতকাল খালেদা জিয়ার কথা ছিল তিনি শত বাধা পেরিয়ে হলেও পেশাজীবী সম্মেলনে যাবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা মানবেন না। এ কারণে সমাবেশের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করতে বলেন। কিন্তু সরকারের কাছে যখন খবর পৌঁছে যায় যে বেগম খালেদা জিয়া সেখানে যাবেনই, তাকে বাধা দিয়ে লাভ হবে না। বরং তাকে বাধা দেয়া হলে ও তাকে যেতে না দিলে এতে সরকার সমলোচনার মুখে পড়বে। এতে করে জনগণও সরকারকে ভুল বুঝবে। পরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে এ সমস্যার সমাধান করা হয়। পুলিশকে বলা হয় সমাবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য। পরে তিনি সমাবেশ যান।
এদিকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ যে কোনো সময়ে হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া তার অবস্থান ও দলের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। তারা যে সর্বদলীয় সরকারের বিষয়টি মেনে নেননি এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতেই অটল রয়েছেন সেটাই সম্ভবত তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন, প্রশাসন ঢেলে সাজানো, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার জন্য যা যা করণীয় তার সব করতে হবে। এ ছাড়াও কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, নির্দলীয় ব্যক্তি ছাড়া কাউকে সরকারপ্রধান মানবেন না সেটাও বলবেন। প্রধানমন্ত্রী সমঝোতার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করার পর গত দুই দিন ধরে যেসব কর্মকাণ্ড বিএনপির প্রতি করা হয়েছে তাও তিনি তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে আন্দোলনের কথাও বলবেন। ২৫ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন তারও নিশ্চয়তা দেবেন। সরকারের দমননীতির কথা তুলে ধরে বলবেন সরকার একদিকে সমঝোতা করতে চায়, অন্যদিকে বিএনপিকে দমাতে চায়। সরকারের এই দ্বৈত আচরণে আস্থা পাচ্ছে না বিএনপি। এ কারণে বিএনপি আগ বাড়িয়ে কিছু করবে না। যা করার সরকারকে দাবি মানার জন্য করতে হবে। দাবি না মানলে বিএনপি সমঝোতা করবে না।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপি মনে করেছিল প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিয়েছেন সেটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েই তারা তাদের প্রস্তাব দেবেন। যাতে করে সরকার তাদের প্রস্তাব মেনে নিতে পারে। সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে সংসদে মুলতবি প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে বিএনপির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে দুই রকম মতও রয়েছে। জোটের নেতাদের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। এক পক্ষ বলছে বিএনপিকে সর্বদলীয় সরকারের জন্য মন্ত্রিপরিষদের সদস্য করতে এমপিদের নাম দিতে প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছে এই প্রস্তাবের পাল্টা প্রস্তাব দিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে ২৪ অক্টোবরের মধ্যেই। সেটি করা সম্ভব হলে বিএনপি সরকারকে দাবি আদায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত বিপাকে ফেলতে পারবে। সরকার এক পর্যায়ে মেনে নিতে বাধ্য হবে বিএনপির দাবি। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থাও নেবে। কারণ বিএনপিকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। নির্বাচন থেকে দূরে থাকা ঠিক হবে না। সরকার একা নির্বাচন করবে। বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন।
এদিকে বিএনপি মনে করছে সরকার তাদের আন্দোলনের মাঠ থেকে সরানোর জন্য ও সরকারে বিরুদ্ধে যাতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে না পারে এজন্য সরকার একটি কৌশল নিয়েছে। এর জন্যই পুরো প্রস্তাব বিএনপির প্রতি ছুড়ে দিয়েছে। আর সেটা দিয়ে ২৫ অক্টোবরের পর বিএনপি যে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় সেটা থামিয়ে দিতে চাইছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী কৌশলেই এটা করেছেন। যাতে করে বিএনপিকে এই প্রস্তাব দিয়ে আলোচনা করা যায়; সময়ক্ষেপণ করা যায়। শেষ পর্যন্ত সরকার তাদের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করবে। আলোচনা করলেও বিএনপি সমঝোতা করতে আগ্রহী নয় অভিযোগ তুলে বিএনপির দাবি মেনে নেবে না।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, কোন সর্বদলীয় সরকার, একদলীয়, দুইদলীয়, তিনদলীয় কিংবা বহুদলীয় সরকার গঠন করেও কোনো লাভ হবে না। কারণ সরকার যে দলীয় সরকার করুক না কেন, নির্বাচন কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ হবে না। আর নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে বিএনপির পক্ষে জয়ী হওয়া সম্ভব হবে না। বিএনপি এবার নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলে ক্ষমতা থেকে বাইরে চলে যাবে। সেটা বিএনপির রাজনীতির জন্য ভালো হবে না। এজন্য সরকার সময় নিতে চাইলেও তা দিয়ে দাবি মানানোর দিকেই নিয়ে যেতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্দলীয় সরকারের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা কোনো দলীয় সরকার চাই না। আমরা নির্দলীয় সরকারই চাইছি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে তা নিরপেক্ষ হবে না। এ কারণে আশা করি সরকার শেষ পর্যন্ত আমাদের নির্দলীয় সরকারের বিষয়টি মেনে নেবে। এরপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব পর্যালোচনা করছি। এরপর প্রতিক্রিয়া আসবে।
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র বলেছে, প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দিলেও তাড়াহুড়া করে বিএনপি এর কোনো জবাব দিতে চাইছে না। এজন্য সময় নিতে চাইছে। সময় নেয়াটা কৌশল। এই সময়ের মধ্যে দলীয় ও জোটের নেতাদের মনোভাব জানা ছাড়াও কূটনীতিকদের মনোভাবও জানা যবে। সব দিক জেনেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপির যারা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে বিএনপির এখন সাড়া দিয়ে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা করা উচিত, তারা অবশ্য ভিন্নভাবে চিন্তা করছেন। তারা মনে করছেন বিএনপির উচিত হবে প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবটি মেনে নেয়া। আর তা মেনে নিয়ে বিএনপি প্রস্তাব দেবে ওই সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুুল হামিদ ও স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী কাউকেই সরকারপ্রধান মানবেন না। ওই সরকারের প্রধান করতে হবে নিরপেক্ষ একজনকে। যিনি সমাজের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তিনি নির্দলীয় হলেও তাকে নির্বাচিত করে আনা সম্ভব। এজন্য তাকে সংসদ সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট, স্পিকার ও মহিলা সংসদ সদস্যদের মতো তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচন করিয়ে নির্বাচিত করে নিতে হবে। ওই ব্যক্তি কে হবেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হবে। আলোচনা করেই ঠিক করা হবে। বিএনপি একজন আর আওয়ামী লীগ একজনের নাম দেবে এমন নয়। সব দল মিলে একজনের নাম দেবেন। সেটা হতে পারে স্যার ফজলে হাসান আবেদ অথবা অন্য কেউ। বিএনপির কাছে ওই সরকারের প্রধান হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসলে তারা সেই নাম দেবে এবং সেই নাম দেয়ার পর সরকারি দল একজনকে বেছে নেবেন। এরপর ভোট হবে। ভোটে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকার গঠন করবেন সর্বদলীয় নির্বাচিতদের নিয়ে। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার রুটিনওয়ার্ক করবে আর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে।
বিএনপির ওই পক্ষ বলছে, সরকারকে এখন এমন অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে যেটা এর আগে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করতে রাজি ছিল না। সরকার এখন ঠিক একই রকম বেকাদায় পড়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বলেছিলেন সরকারের সকল সাফল্য তিনি ম্লান করিয়ে দেবেন এমন পরিস্থিতি করবেন। ঠিক সেই অবস্থায়ই আনা সম্ভব হয়েছে। কারণ ২৫ অক্টোবরের ভয়ে সরকার কেবল সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা কিছুটা হলেও শেখ হাসিনাকে অনড় অবস্থা থেকে সরে আসতে হয়েছে। তাকে আরও সরতে হবে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন করতে কোনোভাবেই রাজি ছিল না তখন শেখ হাসিনার এক দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার করতেই হবে। এর বাইরে কোনো কিছুই তারা মানবে না। কোনো আলোচনাও হবে না। এ কারণে ওই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে আলোচনার জন্য তিনটি চিঠি দেয়ার পরও আলোচনায় বসেননি। বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিতেই হবে। ঠিক ওই নীতি বেগম খালেদা জিয়া অনুসরণ করতে চাইছেন। এজন্য হাসিনার সঙ্গে কোনো আলোচনা চাইছেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্দলীয় সরকার মেনে না নিচ্ছেন। এজন্য ওই সব নেতা মনে করছেন সরকার এখন চাপের মুখে রয়েছে। চাপের মুখে থাকার কারণে সরকারকে কৌশলে দাবি পূরণের দিকে আনা সম্ভব হবে। তারা মনে করছে এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে পাল্টা বিএনপির দাবি-দাওয়া তুলে ধরে একটি প্রস্তাব দিয়ে তা সরকারকে মেনে নেয়ার অনুরোধ করা হবে। আর এটা করার জন্য বিএনপির সামনে ২৪ অক্টোবরের আগে এটা বড় সুযোগ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ কারণে বিএনপি ১৮ দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব তৈরি করবেন। সেজন্য স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া বৈঠক করবেন। সেখানে বৈঠক করেই এরপর ঠিক করবেন কি করবেন এবং কেমন করে প্রস্তাব দেবেন আর ওই প্রস্তাবে কি কি বলবেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সেটা ঠিক করবেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব মেনে নিয়ে ওই সরকারের প্রধান হিসেবে হাসিনাকে না থাকার অনুরোধ করে নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে সরকার গঠনের জন্য বলা হবে। এ ছাড়াও আরও একটি হতে পারে তা হচ্ছে এ সময়ের মধ্যে বিএনপি সব দাবি-দাওয়া বলে দেবে। এতে করে সরকারের কোর্টেই বল ঠেলে দেবেন। সেটা ঠেলে দিয়ে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাবে। সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে। আর সেটা করেই বিএনপি মনে করছে সরকারকে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে যাতে করে সরকার বাধ্য হয় দাবি মেনে নির্বাচন দিতে। সরকার তা না করে যদি এজন্য এক বছর সময় নিতে চায় প্রয়োজন হলে বিএনপি তাও দিতে রাজি আছে। সেই সুযোগ দিয়ে বিএনপি সরকারকে সমালোচিত করার জন্য পথ খুঁজছে। বিএনপির এক নেতা বলেন, সরকার যদি বিএনপির দাবি মেনে না নিয়ে এক বছর ক্ষমতায় থাকে এবং সে কারণে সরকারের মেয়াদপূর্তির তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন না করে তাহলে সরকার সমালোচিত হবে। আর সমালোচিত হলে সরকারের লোকসান হবে। আগামী দিনে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম হবে মনে করে তারা কাজ করছেন।
এদিকে এ অবস্থায় বসে নেই কূটনীতিকরা। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা কোনোভাবেই বিএনপিবিহীন নির্বাচন মেনে নেবেন না। আবার সহিংস ও নাশকতার রাজনীতি করা জামায়াত এবং হেফাজত দেশকে, দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিকে ধ্বংস করার তালেবানি তত্পরতাও অনুমোদন পাবে না কূটনৈতিক মহলে। জনগণও তা সহজভাবে নেবে না। বিএনপির সব কৌশল সব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত হয়তো এখানেই মার খেয়ে যেতে পারে। এমনটি সরকার করলে তারা পর্যবেক্ষকও পাঠাবে না