হারিয়ে যাচ্ছে চির-চেনা বাবুই!

07/06/2014 4:30 pmViews: 6

হারিয়ে যাচ্ছে চির-চেনা বাবুই!নওগাঁ : শিল্পী পাখি হিসাবে পরিচিত বাবুই পাখি। দৃষ্টনন্দন বাসা তৈরিতে যার নেই কোন জুঁড়ি। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, নির্বিচারে তালগাছ কাটায় ক্রমেই বিলুপ্তির পথে এ বাবুই  পাখি।

ছোট হলেও বুদ্ধিতে সব পাখিকে হার মানায় এই বাবুই পাখি। বিগত কয়েক বছর আগেরও বিভিন্ন এলাকার কোথাও কোথাও দেখা গেলেও এখন আর দেখা যায় না বাবুই পাখি ও তার বাসা। “বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।’’ বাবুই হাসিয়া কহে, ‘‘সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পায় তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, কাঁচা হোক তবু ভাই পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।’’

কবি রজনীকান্ত সেনের “স্বাধীনতার সুখ” এ কালজয়ী কবিতার মাধম্যে কবি নিজেই বাবুই পাখিকে শিল্পীর নিদর্শন হিসাবে পরিচিতি দিয়েছে। গ্রাম-গঞ্জের মাঠে তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছে বাসা তৈরি করে বাবুই পাখি করেছে শিল্পের নিদর্শন। মূলত নিরীহ, শান্ত প্রকৃতির এই বাবুই পাখি উচু এবং নিরিবিলি পরিবেশে বাসা তৈরি করে। এক সময় গ্রাম-বাংলার যেখানে সেখানে বাবুই পাখির দেখা মিললেও এখন আর আগের মতো চোখে পড়েনা। শিল্পীর নিদর্শনকারী এ বাবুই পাখিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রাক্ষা করতে সরকারী ও বে-সরকারী পর্যায়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আশু-প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাবুই পাখি দৃষ্টিনন্দন বাসা তৈরির কারণে এ পাখিকে তাঁতী পাখি নামেও চিনে সবাই। পৃথিবীতে ১১৭টি প্রজাতির বাবুই পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশে তিনটি প্রজাতির বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়। এ পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকী পোকা ধরে এনে বাসায় রাখে, আবার সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনণের সময় ছাড়া অন্য সব সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো দাগসহ পিঠ তামাটে বর্ণের হয়।

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার পাখি বিষঙ্গ মুনছুর সরকারের জানান, বাবুই পাখি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো শিকার করা। নির্বিচারে এ পাখির আবাস্থল ধংস করা। যার ফলেই আজ এই পাখি আর চোখে পড়েনা আগের মতো। তবে বিলুপ্তি ঠেকাতে প্রথমত দরকার হলো জন-সচেতনতা আর সরকারীভাবে প্রজনণের মাধ্যমে বাবুই পাখির বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। সরকার এ পাখি অবাদ বিচরণের ব্যবস্থা করতে পারলে আগের মতোই গ্রাম-বাংলায় শোনা যাবে এ পাখির কলতান।

Leave a Reply