হরতালে ব্যাপক ক্ষতি শিক্ষার্থীদের- ক্লাস বন্ধ, পরীক্ষা স্থগিত
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতালে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৩ দিনের হরতালে ইতোমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে আছে। স্থগিত করা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বছরের শেষ সময়ে এসে পরীক্ষার প্রস্তুতি মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
হরতালের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গিয়ে জানা যায়, হরতালের কারণে তারা সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস, মডেল টেস্ট, নির্বাচনী পরীক্ষাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কারণ এ ধরনের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীর মধ্যে অবিভাবকরা সন্তানদের জীবন নিয়ে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। ফলে এসব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তারা বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এভাবে চলতে থাকলে হুমকির মুখে পড়তে পারে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৪ নবেম্বর থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা এবং ২০ নবেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। এ বছর প্রায় ২১ লাখ শিক্ষার্থী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এবং প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেবে। ২১ নবেম্বর থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা এবং ৭ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে দেশের অনেক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলছে। তাছাড়া দেশের সব কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় বিভিন্ন ক্লাসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যা হরতালের কারণে রুটিন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তাছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে নবেম্বর মাস থেকে। এর ওপরও পড়েছে হরতালের প্রভাব।
বিশেষ করে আগামী ৪ নবেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার সিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। কারণ, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতা না হলে আগামী সপ্তাহেও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচীর সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে ২০ নবেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষারও সিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। তাছাড়া অন্য সময়ের তুলনায় বছরের শেষ সময়ে বিভিন্ন শ্রেণীর পরীক্ষার চাপ থাকে বেশি। কিন্তু এবার বছরের শেষ সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়ায় এসব পরীক্ষার সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। একই কারণে বিভিন্ন শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার সিডিউলেও পরিবর্তন করা হতে পারে। বছরের শেষ সময়ে বার্ষিক পরীক্ষার আগে ক্লাশ না নিতে পারলে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস অসম্পন্ন থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি সিলেবাস শেষ করা না যায় তার প্রভাব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলের ওপর পড়াও একইবারেই স্বাভাবিক।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের নবেম্বরের ১২ তারিখ থেকে সব শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা, একাদশ শ্রেণীর অর্ধবার্ষিক এবং দ্বাদশ শ্রেণীর নির্বাচনী পরীক্ষার সূচী ঘোষিত রয়েছে। কিন্তু আগামী সপ্তাহেও যদি হরতালের মতো কর্মসূচী আসে তাহলে আমাদের সব পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হবে। এছাড়া হরতালের কারণে আমরা কয়েকটি মডেল টেস্ট পরীক্ষাও নিতে পারছি না। রাজধানীর নীলক্ষেত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলছে। কিন্তু হরতালের কারণে অর্ধেক পরীক্ষা নেয়ার পর তা বন্ধ রাখতে হয়েছে। এসব পরীক্ষা পরবর্তীতে নিতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট ও মেকআপ ক্লাস চলছিল, তাও বন্ধ রাখতে হয়েছে।