স্মৃতিসৌধে দীপু মনি আখ্যান
সাভার: ক্ষমতায় থাকার সময় যিনি নানা সমালোচনা অগ্রাহ্য করে উড়ে বেড়িয়েছেন নানা দেশে, সেই তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ঢুকতে গিয়ে হোঁচট খেলেন। নিরাপত্তাকর্মীরা যেন তাকে মনে করিয়ে দিলেন, তিনি আর আগের মানুষটি নেই।
আর তাতে বুঝি আঘাত লাগে তার আত্মশ্লাঘায়। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন সদ্যগঠিত মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না-পাওয়া সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই গাড়িসহ ঢোকা না-ঢোকা নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের বাৎচিতে রচিত হয় এক নাটকীয় আখ্যান।
এর আগে পতাকাবাহী গাড়ি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দলের সিনিয়র নেতারা গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করেন স্মৃতিসৌধ এলাকায়। তবে একটু দেরি করে যাওয়া দীপু মনির গাড়ি প্রধান ফটকে আটকে দেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। নিজের সাবেক পরিচয় দিলেন দীপু মনি। কিন্তু তাতে কাজ হলো না। নিরাপত্তাকর্মীদের সাফ জবাব, কেবল পতাকাবাহী গাড়িই প্রধান ফটক পেরোতে পারবে।
এরই মধ্যে স্মৃতিসৌধে পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। গাড়ি নিয়ে প্রবেশে অনড় দীপু মনির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরাও অটল থাকেন তাদের সিদ্ধান্তে। একপর্যায়ে বিষয়টি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর গোচরে নেয়া হলে তারাও বাধ সাধেন দীপু মনির গাড়িসহ প্রবেশে। ততক্ষণে স্মৃতিসৌধে শুরু হয়ে গেছে আনুষ্ঠানিকতা। একপর্যায়ে গাড়িতে বসেই দীপু মনি ফোন করেন বেশ কয়েকজনকে। অপর প্রান্ত থেকে সন্তোষজনক সাড়া না পেয়ে এ সময় নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে জানান, অনুষ্ঠানে তিনি অভ্যাগত কিংবা আমন্ত্রিত নন।
এভাবেই চলে কথা-কাটাকাটি।ততক্ষণে স্মৃতিসৌধে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে শেষে প্রধান ফটকে গাড়ি রেখেই মাথা নিচু করে হাঁটা ধরেন দীপু মনি। হেঁটে হেঁটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবেশ করেন স্মৃতিসৌধ এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিরাপত্তাকর্মী জানান, দীপু মনির গাড়িতে চালকসহ আরো তিনজন ছিলেন। গাড়ি থেকে তাদের নামতে দেননি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। দীপু মনি একাই হেঁটে স্মৃতিসৌধের দিকে যান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ফেরার রাস্তা নির্বিঘ্ন রাখতে তৎপর হয়ে ওঠেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। দীপু মনি নেমে যাওয়ার পর গাড়িটি দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে চালককে কড়া নির্দেশ দেন তারা। চালক বেশি দূরে না নিয়ে স্মৃতিসৌধের গেটের পাশেই পার্ক করেন গাড়িটি। তখন সূচনা হয় নতুন নাটকের।
এবার দীপু মনির গাড়ির দিকে ছুটে যান এক কর্মকর্তা। বেশ ক্ষিপ্ত মেজাজে তিনি গাড়ির চালককে নির্দেশ দেন সেখান থেকেও গাড়ি সরিয়ে নিতে। শুধু তাই নয়, গাড়িটি যেন সবার শেষে বের হয়, তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের এক কর্মকর্তাকে।