স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক ‘নিরব মহামারি’র দিকে যাচ্ছে!
পেশাজীবী অনেক দম্পতি দিনে দিনে যৌনবিমুখ হয়ে পড়ছে। অনেক দম্পতি বছরে ১০ বারের কম যৌনমিলন করে। সেক্স থেরাপিস্টরা এ সমস্যাকে বলেন ‘যৌন-অনশন সম্পর্ক’।
সপ্তাহে মাত্র একবার যৌনমিলনকে বলা হয় নিম্নযৌনতা।
এভাবে দাম্পত্য সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়ার পর অনেক দম্পতি পরামর্শের জন্য ছুটে যান বিশেষজ্ঞের কাছে। কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানের সংস্কৃতি যৌনতা বিষয়ে অনেক খোলামেলা ও উদার হলেও ব্যবহারিক পর্যায়ে পরিস্থিত ভয়াবহ।
বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে এটাকে বলা হচ্ছে ‘নিরব মহামারি’।
দাম্পত্য থেরাপিস্ট অ্যান্ড্রু জি. মার্শাল জানান, ‘এই পেশায় ২৫ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি, গত সপ্তাহে ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব সেক্সুয়াল অ্যাটিচিউডস অ্যান্ড লাইস্টাইল’ প্রকাশিত প্রতিবেদন বিস্ময়কর কিছু নয়। এই প্রতিবেদনে ১৬ থেকে ৪৪ বছরের গ্রুপের ১৫ হাজার নারী-পুরুষ মাসিক গড়ে পাঁচবারের কম যৌনমিলন করেছে। ১০ বছর আগে এই হার ছিল ছয়বারের বেশী।
এর অন্যতম কারণ, বেডরুমে মোবাইল ফোন আর ট্যাব ঢুকে পড়ায় এবং তাতে অফিসের মেইল ও গেম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে এখনকার মানুষ। পর্নোগ্রাফি ব্যাপক হওয়া এবং গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় একা একা যৌনতার আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্গী অংশগ্রহণ না করলেও চলছে।
আরো একটি বড় বাধা হচ্ছে, মা-বাবা হিসেবে যেকোনো সময়ের চেয়ে সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগী থাকা। দাম্পত্য সুস্থতার জন্য কিছুটা ছাড়া দেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে আসা ৫০ বছরের কেট বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, যৌনতার জন্য আমরা ‘হোমওয়ার্ক’-এর সুযোগ পাই না।’ তাকে যখন ‘স্পর্শ চর্চা’র পরামর্শ হলো তিনি জানালেন, ‘আমরা সময় কোথায় পাই? গতরাতে আমরা দুজন যখন একটু তাড়াতাড়ি বিছানায় গেলাম, আমাদের কলেজপড়ুয়া মেয়ে এসে জানালো তার হোমওয়ার্ক তৈরিতে সাহায্য দরকার। এরপর উঠে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ টাইপ করে তার কাজটি করে দেওয়ার বিছানায় ফিরে এসে ক্লান্ত অনুভব করলাম।’
কেটের স্বামী ৫৩ বছরের জেমস তিক্ত কণ্ঠেই অনুযোগ করলেন, ‘আমাদের ১৭ বছরের মেয়ে নিজেই কাজটি করতে পারতো। কিন্তু তার মা পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাকে ‘না’ বলতে পারলো না। অথচ কেট আমাকে সব সময় ‘না’ বলতে পারে।’ এর উত্তরে কেট পাল্টা যুক্তি দিলেন, ‘তুমি নিশ্চয়ই চাও, আমাদের মেয়ে লেখাপড়ায় ভালো করুক।’
দাম্পত্য থেরাপিস্ট অ্যান্ড্রু জি. মার্শালের মতে, এতসব সমস্যা সামলেই নিজের স্বার্থ বজায় রাখা জরুরি। কারণ মনোদৈহিক সুস্থতার জন্য দাম্পত্য সক্রিয়তা খুবই জরুরি। এটাকে অবহেলার কারণে বর্তমানে ‘নিরব মহামারি’র দিকে এগোচ্ছে যৌবন অতিক্রান্ত না হওয়া বিশাল জনগোষ্ঠী।