স্বাগত ২০১৪

01/01/2014 6:59 amViews: 7

মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। নববর্ষ মানে আশা। নিরাপদে বাঁচার আশা। শান্তিময় জীবনযাপনের আশা। সুখ-সমৃদ্ধির স্বপ্নবোনা। প্রাণে প্রাণে সেই স্বপ্নের ছোঁয়া দিতে পৌষের কুয়াশা ফুঁড়ে পূর্ব দিগন্ত রাঙিয়ে উঠেছে ইংরেজি ২০১৪ সালের প্রথম সূর্য। হ্যাপি নিউ ইয়ার। পয়লা জানুয়ারির প্রথমপ্রভাতে নববর্ষকে স্বাগতম। অবশ্য মধ্যরাতে জিরো আওয়ারে বিশ্ববাসীর সঙ্গে বাংলাদেশও স্বাগত জানিয়েছে নতুন বছরকে। ফুল, শুভেচ্ছা কার্ড, উপহার, নানা আয়োজনে আজ নববর্ষ বরণ করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু দেশবাসীর মনে বিরাজ করছে শঙ্কা, দুশ্চিন্তা এবং আতঙ্ক। নতুন বছর রাজনীতির আকাশে কালো মেঘ নিয়ে যাত্রা শুরু করায় এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। রাজনীতির রাশিচক্র বলছে, ২০১৪-তে রাজনৈতিক অঙ্গন থাকবে ২০১৩-এর চেয়ে আরও উত্তপ্ত। নববর্ষের প্রথমদিনেই বিরোধী দল দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে খুলেছে রাজনীতির হালখাতা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৫ জানুয়ারি ভোট হবে। সরকার দশম সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অন্যদিকে এ নির্বাচন প্রতিরোধের কর্মসূচিতে আছে বিরোধী দল। সদ্যগত বছরের শেষদিনগুলো দেখে বলা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চেয়ে চেয়ে দেখবে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের চলমান নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলন। সরকার আরও হার্ড লাইনে যাবে। সব মিলিয়ে নতুন বছরে সরকারি দল ও বিরোধী দল উভয়কে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জের। বিদায়ী বছরের ঘটনাপরম্পরায় স্বাভাবিকভাবেই একতরফা নির্বাচনের বছরটি থাকবে আগাগোড়া ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ এবং অগ্নিগর্ভ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ২০১৪ সাল হবে আলোচিত-সমালোচিত দশম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত নতুন সরকারের জন্য অগি্নপরীক্ষার বছর। নির্বাচনের ফল আগেই জানা হয়ে যাওয়ায় ৫ জানুয়ারির ভোট নিয়ে ভোটারদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও ভোট-পরবর্তী দিনগুলো নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। সরকার জানে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা পেলেও এ নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাই অবশ্যম্ভাবী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হয়তো অপ্রত্যাশিত কিছু সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।

রাজনৈতিক সমীক্ষকদের ধারণা, নতুন বছরে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থার প্রশ্নে দেশের রাজনীতি ও আন্দোলন আবর্তিত হলেও একপর্যায়ে রাজনীতির অঙ্গনে চমক সৃষ্টি হতে পারে। প্রধান বিরোধী দল সরকার পতনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ছিন্ন করে নির্বাচনের রাজনীতির পথে ফিরে আসতে পারে। আর তা হলে এ বছরই দেশবাসী আরেকবার দেখবে নির্বাচনের মুখ। তখন দেশের রাজনীতিতে ভাঙাগড়ার খেলা আর দলবদলের অনেক কাহিনী সৃষ্টি হবে। আরেকদফা নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট রাজনীতির হিসাব-নিকাশও পাল্টে যাবে। তবে রাজনৈতিক সমীক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, ২০১৪ হতে পারে পালাবদলের বছর। সে ক্ষেত্রে রাজনীতির গতিপথ পাল্টাবে। সৃষ্টি হবে মেরুকরণের নবধারা। নতুন বছরের প্রথমদিনে দাঁড়িয়ে আমরা জানি না, স্বার্থান্ধ রাজনীতির কাছে দেশের জনগণ আর কতদিন জিম্মি থাকবে। আমরা জানি না, কবে অবসান হবে রাজনৈতিক খামখেয়ালিপনা। জানি না, নতুন বছরে অপশক্তির ষড়যন্ত্র কি গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে? জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক অজগরটি আজ আমাদের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সহনশীল রাজনীতির অঙ্গনকে গিলে খেতে উদ্যত। এ অজগরবধের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ঘিরে আবর্তিত হবে ২০১৪-এর রাজনীতি।

নববর্ষের প্রথম সকালে দাঁড়িয়ে দেশবাসীর আশা, নির্বাচনকে ঘিরে দেশে শ্বাসরুদ্ধকর যে পরিস্থিতি রয়েছে তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করবে রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের অধিকার নিশ্চয়ই একটি বড় অধিকার। তবে ভোটের অধিকার বেঁচে থাকার অধিকারের চেয়ে বড় নয়। ভোটের অধিকারের চেয়ে বড় নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার। নাগরিকদের নিরাপদ জীবন ও নিরাপদ মৃত্যুর গ্যারান্টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও বিরোধী দলের। এ আবশ্যিক দায়িত্ব পালনে দুই পক্ষের মধ্যে ছাড় দেওয়ার, সমঝোতার মানসিকতা তৈরি হোক। দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুক উভয় পক্ষ। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দল সংযম ও সহিষ্ণুতার পথে এগিয়ে যাবে। তা না হলে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে গোঁয়ার্তুমির একগুঁয়ে রাজনীতি। নতুন বছরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের নাশকতা ও সহিংসতার বৃত্ত ভেঙে, অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কাটিয়ে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

Leave a Reply