ঢাকা: এটি একটি স্নায়ুতন্ত্রের রোগ। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র কোন অজানা কারণ ছাড়াই উদ্দীপিত হয়। ফলে শরীরে মাংস পেশীর খিঁচুনি ও চেতনা লোপ পায়। এই রোগে আক্রান্ত রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। প্রতি হাজার জনের মধ্যে ৪-৬ জনের এই রোগ হতে পারে। মৃগী রোগের বৈশিষ্ট হচ্ছে এই রোগটি বারবার হয়। কারও বা এক দিনে কয়েকবার, কারও বা কয়েক দিনে একবার হয়। সাধারণত খিঁচুিনর পরে আবার স্বাভাবিক জ্ঞান ফিরে আসে। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক কোন কারণ জানা যায়নি। তবে কিছু কারণে মৃগী রোগ হতে পারে তা বলা হলো ঃ
১। মাথায় আঘাত পেলে।
২। জটিল বা দীর্ঘ মেয়াদী প্রসব।
৩। মেনিকনজাইটিস ও এনসেফালাইটিস।
৪। মস্তিষ্কে টিউমার ও মদ্যপান ইত্যাদি।
মৃগীরোগের লক্ষণসমূহ সাধারণত : নি¤œরূপ হয়ে থাকে :
খিঁচুনি হঠাৎ করেই হয় এবং যে কোন জায়গায় হতে পারে। রোগী মাটিতে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেক সময় কান্নার মত চিৎকার দিয়ে এর আক্রমণ শুরু হতে পারে। মুখম-ল রক্তিম হয়ে পড়ে এবং চোখের বলয় ঘুরতে থাকে। এর পরেই রোগীর সম্পূর্ণ শরীর শক্ত হয়ে যায় এবং মুখম-ল নীলবর্ণ ধারণ করতে পারে। তার পর পরেই রোগীর হাত-পা এবং সমস্ত শরীরে একটি ছন্দময় স্পন্দন শুরু হয়। কোন কোন সময় রোগী কাপড়ে প্র¯্রাব-পায়খানা করে ফেলতে পারে, জিহ্বা কেটে রক্ত বের হতে পারে, মুখ দিয়ে সাদা অথবা রক্ত মিশ্রিত ফেনা বের হতে পারে এবং রোগী আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। ঘুম থেকে ওঠার পর খিঁচুনির সময় কি কি ঘটেছে রোগী সে ব্যাপারে কিছুই মনে করতে পারে না।
ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত তাৎপর্য :
মৃগী রোগ যে কোন বয়সে হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগী অনেক সময় হীনমন্যতায় ভোগেন। অনেকে এ রোগকে ছোঁয়াচে কিংবা বংশগত মনে করে থাকে যার জন্য অনেক সময়ে রোগীর চাকরিতে বা বিয়ের ব্যাপারে বিরূপ প্রভাব ফেলে। খিঁচুনির সময় রোগী পড়ে যেয়ে শরীরে মারাত্মক আঘাত পেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে। খিঁচুনি যদি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যেমন আগুনের নিকটে, জলাশয়ের কাছে, চলমান যন্ত্রের কাছে অথবা উচুঁস্থানে হয় তাহলে রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মৃগী রোগীর চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করা, রোগীর ব্যক্তিগত ক্ষতি কামানো, সমাজে প্রচলিত ভুল বিশ্বাসকে ঠেকানো এবং রোগীর ব্যবহারিক ও সামাজিক জীবনকে উন্নত করা।
চিকিৎসা
অত্যন্ত সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে একজন মৃগী রোগী তার সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে। প্রচলিত বিশ্বাসগুলো বৈজ্ঞানিক আলোকে দূর করে চিকিৎসা নিলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি হলে একমাস লাগতে পারে। রোগের উল্লেখিত উপসর্গ ও প্রকৃতি অনুযায়ী আপনি যদি বুঝেন এটি মৃগী রোগ তাহলে অবিলম্বে ওষুধ শুরু করতে হবে। বয়স ও লিঙ্গ ভেদে এর মাত্রা কম বেশি হতে পারে। যেমন স্বাভাবিক প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীর জন্য ট্যাবলেট টেগ্রেটল ২০০ মিলিগ্রাম-১/২ ট্যাবলেট দিনে ২ বার-৭ দিন ও ৭ দিন পরে ১টা করে দিনে ২ বার করে চালাতে হবে। অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। ভুলে যাবেন না মৃগী রোগে বহু মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।