স্বর্ণমন্দির অভিযানে ভারতকে ব্রিটেনের গোপন সাহায্যের তথ্য ফাঁস
ডেস্ক : ভারতের অমৃতসরে শিখদের তীর্থকেন্দ্র স্বর্ণমন্দিরে ৩০ বছর আগে চালানো সেনা-অভিযানে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ভারতকে সাহায্য করেছিল, লেবার পার্টির একজন এমপি এই দাবি করার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।ব্রিটিশ এমপি টম ওয়াটসন বলছেন, মার্গারেট থ্যাচারের আমলের সরকারি নথিপত্র যা সবেমাত্র জনসমক্ষে এসেছে – তা দেখেই তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন।
এদিকে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ নামে ওই সেনা-অভিযানের ৩০ বছর পূর্তিতে অনেক শিখ সংগঠনই সেই ঘটনার তদন্ত দাবি করছেন তারাও এখন সে সময় ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত ভূমিকা কী ছিল, তা জানানোর দাবি তুলেছেন।
তিন দশক আগের অপারেশন ব্লু স্টার যা ভারতের ইতিহাসে আজও একটি ভীষণ বিতর্কিত অধ্যায় – তা নিয়ে আবার নতুন করে আর একটি বিতর্কের সূচনা করেছেন বার্মিংহামের কাছে ওয়েস্ট ব্রমউইচের লেবার এমপি টম ওয়াটসন।
ওয়াটসন বিবিসিকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি গোপনীয়তার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর তিনি পুরনো সরকারি নথি ঘেঁটেছেন এবং দেখতে পেয়েছেন ওই প্রাণঘাতী অভিযানে ব্রিটিশ সরকার ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।
তিনি বলেছেন, ‘অত্যন্ত গোপনীয় ওই নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ এসএএস যাতে ওই অভিযানের পরিকল্পনা ও রূপায়নে ভারতের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করে, মার্গারেট থ্যাচারের সরকার তা অনুমোদন করেছিল। ফলে তখন ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য !’
ওয়াটসনের কথায়, ‘আমার কেন্দ্রের ভোটারদের তরফে আমি এতে অত্যন্ত ব্যথিত ও হতাশ যে অভিযানে এত প্রাণহানি হয়েছিল, যা এত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তাতে কি না আমরাও জড়িত ছিলাম!’
ওয়াটসন এই দাবি করার পর এর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও দেরি করেননি।
সম্ভবত তার বড় কারণ, ব্রিটেনে বসবাসকারী পাঁচ লক্ষেরও বেশি শিখ এই তথ্যকে ভালভাবে নেবেন না এখন ক্ষমতায় থাকা ব্রিটেনের আর একটি টোরি সরকারেরও সেটা জানা আছে।
তবে অপারেশন ব্লু স্টারে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেই সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কুলদীপ সিং ব্রার অবশ্য দিল্লিতে বিবিসিকে সরাসরি বলেছেন, ওই অভিযানে কোনও বিদেশি শক্তির সাহায্য ছিল বলে তার জানা নেই।
জেনারেল ব্রার বলেন, ‘ওই অভিযানে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল এমন কথা আমি আজকের খবরের কাগজেই প্রথম দেখলাম।’
বিতর্কিত ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা বিদেশি ভূমিকার কথা কার্যত অস্বীকার করলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বিষয়টি সরকারের চোখে পড়েছে, এখন ব্রিটিশ সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হবে।
অপারেশন ব্লু স্টারের তিরিশ বছর পূর্তিতে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন শিখ সংগঠন ইতিমধ্যেই ওই অভিযানকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নতুন করে তদন্ত দাবি করছেন ফলে স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে ভারতও খুব সাবধানে পা ফেলতে চাইছে।
তবে প্রভাবশালী শিখ রাজনীতিক ও রাজ্যসভা এমপি তারলোচন সিং আজ বলেছেন, ব্রিটেনের নথি থেকে তদানীন্তন ভারত সরকারের অভিসন্ধি কী ছিল, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘যে নথিটির কথা বলা হচ্ছে, তার তারিখ ২রা ফেব্রুয়ারির। যা থেকে বোঝা যায় জুনের অপারেশন ব্লু স্টারের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ভারত সরকার স্বর্ণমন্দির আক্রমণ করার পরিকল্পনা আঁটছিল। আর সবচেয়ে কদর্য ব্যাপার যেটা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারত সরকার কেন বিদেশি সাহায্য চাইবে ?’
টম ওয়াটসনের দাবির সূত্র ধরে তারলোচন সিং ও বেশ কয়েকটি শিখ গোষ্ঠী দাবি করেছে ওই অভিযানে কার আসলে কী ভূমিকা ছিল, কে-কখন-কীভাবে এর নকশা করেছিলেন ভারতেও তার তদন্ত করতে হবে।
তবে দেশের সব রাজনীতিক এই দাবির সঙ্গে একমত নন জনতা দল(ইউ)-এর নেতা ও এমপি আলি আনোয়ার আনসারি যেমন বলছেন, এই সব পুরনো ব্যথা খুঁচিয়ে তুলে কারও কোনও লাভ হবে না।
আনসারির প্রশ্ন, ‘পেছনে-ফেলে আসা ইস্যু নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে কী ফায়দা ? এসবের এখন আর কোনও গুরুত্ব নেই! পশ্চিমের দেশগুলোতে এগুলো নিয়ে নানান দেখানেপনা চলে – কিন্তু অপারেশন ব্লু স্টার এখন বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা অধ্যায়। শরীরের পুরনো ঘা-য়ে খোঁচাখুঁচি করে কে কী পাবে বলুন ?’ বিহারের এই মুসলিম নেতার বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের সব শিখ যে একমত হবেন তা অবশ্য মনে করার কোনও কারণ নেই!
দেশে-বিদেশে শিখ সম্প্রদায়ের অনেকেই বিশ্বাস করেন অপারেশন ব্লু স্টার ছিল শিখ ধর্মের ওপর একটা আঘাত এবং সেই হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত আজও হয়নি।
ব্রিটিশ এমপি টম ওয়াটসন যে বিষয়টি আর্কাইভ খুঁড়ে বের করেছেন, ফলে এখন তা নিয়ে বিতর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে বাধ্য !
সূত্র : বিবিসি