স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন সাকাসহ কয়েকজন
বিএনপির তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি পর্যন্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আরো দু-তিনজন স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন।
প্রথাগতভাবে কমিটি গঠনের যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। চেষ্টা করা হবে সব স্তরে গোপন ভোটে নেতা নির্বাচনের। আগামী এপ্রিলে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করার লক্ষ্যও ঠিক করা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেশ কিছু নেতার সঙ্গে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দল গোছানোকেই এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন খালেদা জিয়া। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, দল গোছানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তনের বিষয়টিও রাখা হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি কী পরিবর্তন আনা হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ তিন-চারজনকে স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। শূন্য পদগুলো জ্যেষ্ঠ নেতাদের দিয়ে পূরণ করা হবে অথবা স্থায়ী কমিটির আকার ছোট করা হবে। বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সদস্যসংখ্যা ১৯। এ সংখ্যা ১৫-তে কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। কমিটির আকার ছোট করা না হলে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে ‘বিশেষ নীতিনির্ধারণী কমিটি’ গঠন করা হবে। সেখানে খালেদা জিয়াসহ পাঁচ থেকে সাতজন সদস্য থাকবেন। জানা গেছে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ (সাকা চৌধুরী) বর্তমান স্থায়ী কমিটির তিনজন সদস্যকে নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে সাকা চৌধুরী যদি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে আসতে পারেন, তাহলে তাঁকে আবারও এ পদে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। বিএনপির ‘সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব’ পদটিকে নিয়েও নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এটিকে ‘সংরক্ষিত’ পদ হিসেবে গঠনতন্ত্রে রেখে দেওয়া হবে। তবে আপাতত শূন্য থাকবে। তারেক রহমানের জন্য যেহেতু এ পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল সে জন্য এটিকে সংরক্ষণ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জানিয়েছেন, যা কিছু পরিবর্তন আনা হবে, তা আগামী জাতীয় কাউন্সিলে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হবে। এপ্রিলে কাউন্সিল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল করা হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, পরিবর্তনের যে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে তা ঠিক। এটা প্রয়োজনও বটে। দীর্ঘদিন কাউন্সিল হয় না। দলের জেলা-উপজেলা শাখায় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে একই অবস্থা। কাজেই পুনর্গঠন খুবই দরকার। কারণ সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি সরকারে নেই, সংসদেও নেই। আবার যে আন্দোলন করা হয়েছে তার ফসল তোলাও সম্ভব হয়নি। ঘর গোছাতে না পারলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যাকে যেখানে বসানো দরকার, সেটা করতে হবে। গোপন ভোটে নেতা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। একটি গণতান্ত্রিক দেশে দলগুলোর মধ্যে এ চর্চা জরুরি এবং সেটা করতে পারলে অভূতপূর্ব ব্যাপার ঘটবে। এর মধ্য দিয়ে দেশ ও দলের প্রতি অনুগত, মেধাবী এবং দক্ষ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। জানা গেছে, দল গোছানোর কাজ আজই শুরু হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মতবিনিময় করবেন ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে। তিনি মহানগরের নেতাদের বক্তব্য শুনবেন। তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন। এরপর তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন। তবে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করা হতে পারে এর সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর। সাম্প্রতিক আন্দোলনে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারায় ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ চলছে। নতুন করে আন্দোলন শুরুর আগেই এ কমিটির পুনর্গঠন খুবই জরুরি বলে মনে করছেন নেতারা। কালেরকণ্ঠ |