থ্রী এ্যাঙ্গেল মেরিন লিঃ, নয়ানগর, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এর সংবাদ সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল ১২ জুন বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ্যাঙ্গেল মেরিন লিঃ, নয়ানগর, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এর সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন আমরা থ্রী এ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড দেশের সরকারী ও বেসরকারি নৌযান নির্মাণ সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছি। এরমধ্যেই একটি অসাধুচক্র ব্যবসায়িক কৌশলে আমাদের ক্লাইন্ট সেজে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেস্টা করে। যার অংশ হিসাবে একটি অবৈধ জাহাজ আমাদের ডকে এনে কাজ করিয়ে বিল পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। আমরা বিলের জন্য বারবার তাগিদ দিলে এক পর্যায়ে বিল না দিয়ে কৌশলে ডক থেকে জাহাজটি সরিয়ে নেয়। উপরন্ত ওই জাহাজ আমাদের ডক থেকে খোয়া যাওয়ার অজুহাজ তুলে আমাদের ফাঁসানোর ফন্দি আঁটে। ইতিমধ্যেই যা নিয়ে আমারা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তবে কোনো কোনো প্রচারমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হওয়ায় আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টি তুলে ধরার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।
এ বিষয়ে আমরা আপনাদেরকে জানাতে চাই যে, গত ২২/০৫/২০২৩ ইং তারিখে নয়ানগর, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এ অবস্থিত স্ত্রী এ্যাঙ্গেল মেরিন লিঃ শিপইয়ার্ডে জনৈক মিলন হাজী, রফিক এবং আবুল হোসেন নামে ব্যক্তিবর্গ টি. টেকনাফ নামক একটি পুরাতন অয়েল ট্যাংকার জাহাজ মেরামতের জন্য নিয়ে আসেন। মেরামতের পর প্রথমত: আমরা ২৩/০৭/২০২৩ ইং তারিখে ৫,২৪,০০০.০০ (পাঁচ লক্ষ চব্বিশ হাজার) টাকার বিল দাখিল করি। তখন তারা কোন বিল প্রদান করেনি এবং জাহাজও ডেলিভারী নেননি। এরপর আরো ০৫ মাস পর গত ০৩/০১/২০২৪ইং তারিখে জনৈক রফিক নামক ব্যক্তি আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা ঐ সময় পর্যন্ত টাকা ১১,৩৬,০০০.০০ এর বিল তাকে প্রদান করি এবং তিনি এই বিল গ্রহণ করেন।
তিনি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে জাহাজটি আমাদের মাধ্যমে আনডকিং করে পানিতে বার্থিং করে রাখেন। সেদিন তিনি জাহাজটি ডেলিভারী নিতে চান এবং ০২ (দুই) দিন পর আমাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পাওনা বিলের অর্থ পরিশোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় পানিতে বার্থিংরত জাহাজে তিনি তার নিজস্ব ০২ (দুই) জন স্টাফ সার্বাক্ষনিক জাহাজে পাহারারত অবস্থায় রেখে চলে যান এবং অদ্যবদী কোন বিল পরিশোধ করেন নাই। এরই ধারাবাহিকতায় পাওনা বিলের জন্য জনাব রফিককে বারংবার তাগাদা প্রদান করা হয়।
গত এপ্রিল/২০২৪ মাসের শেষের দিকে সন্ধ্যার পর পানিতে বার্থিংরত টি.টেকনাফ জাহাজটি নেয়ার জন্য ০২ টি টাগবোট জাহাজটির পাশে ভিড়লে শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের তা গোচরীভূত হয় এবং তখন শিপইয়ার্ড হতে জাহাজটি নিতে বাধা প্রদান করলে টাগবোট দুইটি চলে যায়। পাশাপাশি পাওনা বিল আদায়ের জন্য স্ত্রী এ্যাঙ্গেল মেরিন লিঃ হতে তাগাদা অব্যাহত রাখা হয়। প্রকাশ থাকে যে, জাহাজটি শিপইয়ার্ডের দক্ষিণ পাশে শেষ প্রান্তে মেঘনা নদীতে জাহাজ মালিক পক্ষের ২/৩ জন স্টাফের তত্ত্বাবধানে বার্থিং অবস্থায় ছিল (পানিতে বার্থিং এর আলোকচিত্র সংযুক্ত করা হলো)। গত ১৬/০৫/২০২৪ইং তারিখে এতদপর্যন্ত বার্থিং চার্জসহ মোট প্রায় ৩০.০০ (ত্রিশ লক্ষ) টাকার বিল জনাব রফিক সাহেবকে প্রদান করি এবং তিনিও তা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তারা কোন বিল প্রদান না করে টালবাহানা শুরু করে। এভাবে পানিতে বার্থিং থাকা অবস্থায় গত ১৯/০৫/২০২৪ ইং তারিখে সকাল থেকে টি. টেকনাফ অয়েল ট্যাংকার জাহাজ মালিকের ২/৩ জন স্টাফসহ উক্ত স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি শিপইয়ার্ডে যারা জাহাজ মেরামতের জন্য আনেন তাদের জানালে তারা জাহাজ এবং স্টাফদের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। উক্ত সময়ে জাহাজের স্টাফদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর চাইলে তারা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। জাহাজটি বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে স্ত্রী এ্যাঙ্গেল মেরিন লিঃ এর পক্ষে জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) গত ২৯/০৫/২০২৪ তারিখে স্থানীয় গজারিয়া থানায় জাহাজ না পাওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বেঙ্গল ইলেকট্রিক লিঃ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী Counter হিসেবে ০১ (এক) দিন পর গত ৩০/০৫/২০২৪ ইং তারিখে গজারিয়া থানায় ভুল তথ্য সম্বলিত স্ত্রী এ্যাঙ্গেল মেরিন লিঃ এর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ পেশ করেন।
মূলত আমরা জাহাজটি ২০২৩ সালের মে মাসে ডকিং করলেও অক্টোবর মাসে এসে জানতে পারি জাহাজটি মের্সাস বেঙ্গল ইলেকট্রিক এর মালিকানাধীন। নৌযানটির নির্মাণ সন ১৯৪৫। ১৯৭২ সালে BIWTCএর বহরে যুক্ত হয়। অতঃপর মেসার্স মাল্টিপল ইকুইপমেন্ট এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং গত ২৯/১১/২০১৮ ইং তারিখে BIWTC হতে নৌযানটি ১,১১,০০,০০০/- (এক কোটি এগার লক্ষ) টাকায় Scrap হিসাবে কিনে নেয়। Scrap জাহাজ কেনার পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘোষণাপূর্বক উহা Scrap হিসাবে বিক্রয়ের প্রচলিত বিধান থাকলেও এই কোম্পানিটি দীঘ ৫ (পাঁচ) বছরের অধিককাল সময় কোন কারনে ফেলে রেখে দিল তা অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি। প্রকৃত পক্ষে এই কোম্পানী বা তার Subsidiary সকল কোম্পানীর মালিকানাধীন নৌযানসমূহের উপর একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হলে দেখা যাবে যে, তারা মূলত পুরাতন নৌযান ক্রয়পূর্বক ওগঙ এবং নৌ নিরাপত্তার সকল বিধি ভঙ্গ করিয়া নতুন নৌযান হিসাবে রেজিষ্ট্রেশন করিয়া বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে কিছু অসাধু চক্রের মাধ্যমে সামান্য কিছু মেরামত করে এবং সরকারি সংস্থার সমূহকে বিভ্রান্ত করিয়া তারা এই কুকর্ম সম্পাদন করে থাকেন। আমাদের নিকট তাদের পক্ষ হতে এই ধরনের প্রস্তাব দেয়া মাত্র আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি এবং নৌযানটি আনডকিং করি। এর কিছুদিন পরই তাদের নৌযানটি তারা রাতের অন্ধকারে প্রায় ৩০.০০ (ত্রিশ) লক্ষ টাকা বিল এবং ২টি Air Bag এর ক্ষতিপুরন প্রদান না করিয়া নৌযানটি অন্যত্র সরাইয়া নিয়া যায়।
এমন পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের কাছে নিবেদন জানাচ্ছি, পুরো বিষয় সুচারুভাবে যাচাইবাছাই করে সঠিক তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরে অসাধুচক্রটিকে আইনানুগভাবে শাস্তির আওতায় নিতে সহায়তা করবেন। পাশাপাশি দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে এ ধরনের চক্রের কবল আর না পড়ে সে সবাইকে সর্তক থাকার আহবান জানাই। সর্বপরি আমাদের পাওনা মজুরি বিল অবিলম্বে যাতে পেতে পারি সে জন্যও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করি। আমরা আমাদের বক্তব্যের সপক্ষে প্রয়োজনীয় অনুলিপি সংযুক্ত করেছি।