সৌদি থেকে দেশে ফিরছেন হাজার হাজার শ্রমিক ; কাতারে চাকরি হারানোর শঙ্কায় অনেকে ; মালয়েশিয়ায় ধরপাকড়ে দিশেহারা বাংলাদেশীরা শ্রমবাজারে অশনিসঙ্কেত

08/07/2017 10:54 amViews: 6

সৌদি থেকে দেশে ফিরছেন হাজার হাজার শ্রমিক ; কাতারে চাকরি হারানোর শঙ্কায় অনেকে ; মালয়েশিয়ায় ধরপাকড়ে দিশেহারা বাংলাদেশীরা

শ্রমবাজারে অশনিসঙ্কেত


সৌদি থেকে দেশে ফিরছেন হাজার হাজার শ্রমিক ; কাতারে চাকরি হারানোর শঙ্কায় অনেকে ; মালয়েশিয়ায় ধরপাকড়ে দিশেহারা বাংলাদেশীরা শ্রমবাজারে অশনিসঙ্কেত মনির হোসেন ০৮ জুলাই ২০১৭,শনিবার, ০৭:০০ 38 0 0 Google 0 38 বাংলাদেশী শ্রমিক : ফাইল ছবি বাংলাদেশী শ্রমিক : ফাইল ছবি জনশক্তি রফতানিতে অশনিসঙ্কেত দেখতে পাচ্ছেন এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদেশগামী কর্মীর গতি ঠিক থাকলেও মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ২০ হাজার শ্রমিক কম রফতানি হওয়ায় এ শঙ্কা বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এ দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনের শ্রমবাজারের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হওয়ার পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় প্রফেশনাল ও স্টুডেন্ট ভিসায় পাড়ি জমানো শ্রমিকদের এখন ঘুম হারাম। তাদের অনেকেই নতুন করে ভিসা নবায়নের সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার কারণে দেশব্যাপী ইমিগ্রেশনের সাঁড়াশি অভিযানে হাজারো বাংলাদেশী কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এসব ঘটনার কারণে আবারো শ্রমবাজারে অশনিসঙ্কেতের আলামত দেখতে পাচ্ছেন এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও রামরুর চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বিভিন্ন দেশে শ্রমিকেরা সমস্যায় আছেন এটা আমি স্বীকার করছি। তারপরও শ্রমবাজারে অশনিসঙ্কেত, এ কথা আমি বলব না। তবে লেবার মার্কেটে আমরা দেখছি কেউ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন না। আর যেসব অব্যবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলোতে তাদেরও (সরকার) একটা ভূমিকা আছে। এই জায়গাতেই আমাদের বক্তব্য থাকবে। তিনি বলেন, কিছু জিনিস গ্লোবালি হচ্ছে আবার কিছু হচ্ছে আমাদের নিজেদের সৃষ্ট। কিন্তু সরকার এসব ব্যাপারে কিছুই করছে না। সাম্প্রতিক সময়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ১৫-১৬ দেশে জনশক্তি রফতানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, বাহরাইন, ওমান, সিঙ্গাপুর, জর্ডানে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকও যাচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ ২০ হাজার ৪৯০ জন বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে সর্বোচ্চ এক লাখ ছয় হাজার ৫০১ জন শ্রমিক গেছেন মার্চে। তবে পরিসংখ্যানে প্রথম পাঁচ মাসে গড়ে প্রতি মাসে ৮৩ হাজার শ্রমিক গেলেও জুনে গেছে মাত্র ৬৮ হাজার শ্রমিক। হঠাৎ করেই এক মাসে প্রায় ২০ হাজারের মতো শ্রমিক কম যাওয়ায় শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কার কথা বলছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে শ্রমিক দেশে ফেরত আসা, ফ্রি ভিসার নামে গিয়ে কাজ না পাওয়া, কাতারে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা এবং মালয়েশিয়ায় প্রফেশনাল ভিসায় বৈধভাবে হাজার হাজার শ্রমিক পাড়ি জমানোর পরও অবৈধ হওয়ার ঘটনায় এই শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এর আগে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ নয়া দিগন্তের এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, সৌদি আরবে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত শ্রমিক চলে এসেছে। তিনি বলেন, তারপরও এ দেশের সরকার তিন মাসের যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল সেই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে ৩৬ হাজার শ্রমিক দূতাবাস থেকে আউট পাস নিয়েছেন। আরো অবৈধ শ্রমিক থাকতে পারে এমন চিন্তা করে দেশটির সরকার আরো এক মাসের সময় বাড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আরো বেশ কিছু শ্রমিক আউট পাসে দেশে ফিরে যেতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে এখানে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছু বড় কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা সাত-আট লাখ টাকা নিয়ে একেক জন শ্রমিককে এ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই বিষয়গুলো অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। শুধু সৌদি আরব নয়, ইতোমধ্যে কাতারের ওপর সৌদি আরবসহ প্রতিবেশী ছয়টি রাষ্ট্র অবরোধ আরোপ করেছে। এতে দেশটিতে থাকা লাখো বাংলাদেশী শ্রমিক এখন চাকরি হারানোর শঙ্কায় দিন গুনছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে দেশে স্বজনদের টেলিফোন করছেন। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে আরেক বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায়। গত কয়েক বছরে দেশটির সরকারের ইচ্ছায় লাখ লাখ শ্রমিক প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা হঠাৎ করেই সেই সব ভিসার ওপর নবায়ন বন্ধ করে দিয়ে ২ জুলাই শুক্রবার মধ্য রাত থেকে ধরপাকড় শুরু করেছে। এর মধ্যে প্রফেশনাল ভিসা ছাড়াও স্টুডেন্ট ভিসা ও ভিজিট ভিসায় যাওয়া লোকজনও রয়েছেন। আর এতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক ধরা পড়েছেন। তবে মালয়েশিয়া সরকার এখন ওই সব শ্রমিককে থ্রি প্লাস ওয়ান পদ্ধতিতে দেশে ফেরার জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তবে এই সুযোগ কতজন নেন সেটি দেখার বিষয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহৎ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার সাড়ে চার বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সম্প্রতি দেশটি সফর করে আবারো শ্রমিক যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন শ্রমিকও যেতে পারেননি। একই চিত্র আরেক শ্রমবাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায়। ইরাকে ঝুঁকি থাকার কথা অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলার পরও সরকার এখনো দেশটিতে শ্রমিক টুকটাক পাঠাতে কিয়ারেন্স দিচ্ছে। বাহরাইনের শ্রমবাজারের অবস্থাও খারাপ। সবমিলিয়ে এ অবস্থায় শ্রমবাজারের গতি আগামীতে কতটুকু ঠিক থাকবে তা নিয়ে সন্দিহান আছেন অনেকেই। এ ব্যাপারে রামরুর চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এখানে স্টাডি করে দেখেছি বিদেশগামী একজন শ্রমিক যাওয়ার আগে কমপক্ষে তিনবার প্রতারিত হচ্ছেন। তারপরই সেই ব্যক্তি বিদেশ যেতে পারছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারকে আরো দায়িত্ববান হতে হবে। আর একটি বিষয় আমরা স্পষ্ট করে বলছি ফ্রি ভিসা বলতে কোনো ভিসা নেই। এই ভিসায় লোক যাওয়া বন্ধ করতে হবে। আমরা আগে থেকেই এটা বন্ধের জন্য সরকারকে অনুরোধ করে আসছি। গত রাতে নাম না প্রকাশের শর্তে একজন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ নয়া দিগন্তকে বলেন, দুবাই, লিবিয়া মার্কেট বন্ধ। টাকা খরচ করে টুকটাক জনশক্তি ব্যুরো থেকে ইরাকের ছাড়পত্র মিলছে। এর মধ্যে সৌদি আরব, বাহরাইন, মালয়েশিয়া ও কাতারের পরিস্থিতি শোচনীয় স্বীকার করে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাস বা হাইকমিশনে ক্যাপাসিটি আছে। কিন্তু তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এসব বিষয়ে সরকারের মনিটরিং আরো বাড়ানো উচিত। নতুবা সামনে আবারো নতুন করে অশনিসঙ্কেত দেখা যেতে পারে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর বিমানবন্দর থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জাবেদ আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, সৌদি আরব, কাতার ও মালয়েশিয়ায় এই মুহূর্তে শ্রমবাজারে সমস্যা দেখছি। তারপরও সব কিছু ঠিক থাকলে আমরা আমাদের টার্গেট মোতাবেক এ বছর ১০ লাখ শ্রমিক পাঠাতে পারব বলে আশা করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসলে কাতারের অবরোধ যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে আমাদের অনেক শ্রমিককে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে হবে।

Leave a Reply