সৌদি আরবে গণতন্ত্র চেয়েছিলেন নিমর
২০১০ সাল থেকে যখন আরব বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে গণবিপ্লবের আবির্ভাব দেখা দেয়, তখনই সৌদি আরবের রাজতন্ত্রের সরাসরি সমালোচনা করতে শুরু করেন তিনি। দেশটিতে শিরা-উপশিরায় পেঁচিয়ে থাকা জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সৌদিতে নির্বাচনের দাবি তোলেন নিমর। রাজ সরকারবিরোধী এমন চক্রান্তমূলক মনোভাবের কারণে ‘বৈদেশিক অনধিকারচর্চা’বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শনিবার নিমরসহ ৪৭ জনকে শিরশ্ছেদ দেয় সৌদি আরব। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠিত রাজ পরিবারবিরোধী এ সৈনিক দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় আওয়ামিয়াহ প্রদেশের কাতিফ গ্রামে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
১০ বছরেরও বেশি সময় ইরানের তেহরানে ও তারপর সিরিয়ায় পড়াশোনা শেষে ১৯৯৪ সালে সৌদিতে ফেরেন।
এরপর সৌদিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার ডাক দিলে, তার চোখ রাঙানি ও বলিষ্ঠ বক্তব্যের কারণে শিগগিরই নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে পড়েন তিনি। এরই জেরে ২০০৪ ও ২০০৬ সালে দু’মেয়াদে সংক্ষিপ্ত সময়ে কারাবাসে যান তিনি। তখন থেকেই ধীরে ধীরে ইরান ও সৌদি আরবে শিয়া সমর্থিত তরুণদের কাছে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠেন নিমর।
২০০৯ সালে মোহাম্মদ (সা.)-এর কবরকে কেন্দ্র করে শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে বিবাদের জেরে ৬ জন শিয়াপন্থীকে আটক করে সৌদি গোয়েন্দা পুলিশ মাবাহিথ। সরকারের এমন বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতায় নিমরের ওপর আটকাদেশ জারি করা হয়।
২০১০ সাল থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণবিক্ষোভের জোয়ার শুরু হতে থাকে, যাকে পশ্চিমা সাংবাদিকরা ‘আরব বসন্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
মিসর থেকে শুরু হয়ে তিউনিসিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন হয়ে বাহরাইনে ছড়িয়ে পড়ে এর আভা। বাহরাইনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সুন্নি রাজ পরিবাররাই সেখানের শাসক। এজন্য ২০১১ সালে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে শিয়াগোষ্ঠী। সৌদি আরবেও এর ছোঁয়া লাগে। ২০১২ সালে শিয়াদের সমর্থনে নিজের গ্রাম
কাতিফেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন নিমর। ৮ জুলাই সৌদি সরকারবিরোধী এক বিক্ষোভে নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে পায়ে ৪টি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে আটক করা হয়। এ অবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে বরং কারাগারে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ অমানবিক নির্যাতন করেছে বলেও অভিযোগ ওঠে।
২২ জুলাই নিমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার স্ত্রী মুনা জাবির বলেন, ১৯ জুলাই থেকে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন। শাসককে অমান্য করার অভিযোগে ২০১৩ সালে মামলা শুরু হলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন বিশেষ আদালত।
২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবরে সৌদি সুপ্রিমকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থার বিরোধিতা সত্ত্বেও এ বছরের ২ জানুয়ারি তার শিরশ্ছেদ করা হয়।