সোহাগ বিস্ময়ে উজ্জ্বল বাংলাদেশ চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র

13/10/2013 8:58 pmViews: 13

168885ক্রীড়া প্রতিবেদক : টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত আঙিনায় বাংলাদেশের বসত চলছে ১৩ বছর ধরে। সাদা পোশাকে লঙ্গার ভার্সনের এই ক্রিকেটে এখনও পরিপূর্ণভাবে ধাতস্ত হতে পারেনি বাংলাদেশ। গত দুই বছর ধরে অবশ্য চিত্রটা কিছুটা বদলে যেতে শুরু করেছে। ওয়ানডের মতো টেস্টেও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে মধুর দিনের দেখা মিলছে। চট্টগ্রামের সাগরিকাতে গতকাল তেমনই একটি মধুর দিন কাটাল বাংলাদেশ। কোরবানির ঈদের আনন্দে বুঁদ হওয়ার আগে দেশবাসীকে টাইগার বাহিনী উপহার দিল একটি জয়ের আনন্দ সমান ড্র। সাহারা কাপের প্রথম টেস্টে পাঁচদিন ছড়ি ঘোরানোর পর গতকাল চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ১০ ম্যাচে কিউইদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় ড্র। এর আগের ড্রও ছিল এই চট্টগ্রামে ২০০৮ সালে। সেখানে অবশ্য বৃষ্টির আশীর্বাদ ছিল। এবার ভারতে আঘাত হানা ঝড় ‘পাইলিনের’ হুমকি চট্টগ্রামেও ছিল। তবে সেটি খুব প্রভাব বিস্তার করেনি। ব্যাট-বলের লড়াই দিয়েই শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্টের। টেস্টে ৮০ ম্যাচে বাংলাদেশের এটি নবম ড্র।

চতুর্থ দিনেই ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিত হয়েছিল। ম্যাচে প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ৪৬৯ রানের জবাবে চতুর্থ দিনে লাঞ্চে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৫০১ রানে। সোহাগ গাজীর সেঞ্চুরিতে ৩২ রানে লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে চতুর্থ দিনের খেলা নষ্ট হয়েছে ১৫ ওভার। চতুর্থ দিনেই এক উইকেটে ১১৭ রান তুলেছিল কিউইরা দ্বিতীয় ইনিংসে। গতকাল পঞ্চম দিনে তাই ম্যাচের ভবিষ্যত্ ড্রয়ের মাঝেই নিহিত ছিল। যদিও নিউজিল্যান্ড চেষ্টা করেছিল লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশের সামনে বিশাল কিছু ছুড়ে দিতে। যার চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে পা হড়কাতেও পারত বাংলাদেশের! কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে ব্যাট হাতে বেপরোয়া হওয়ার সুযোগ পাননি কিউইরা। উল্টো লাঞ্চের পর ব্যাট করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশকে পাইয়ে দিল গর্বের অনুষঙ্গ। আরও স্পষ্ট করে বললে সোহাগ গাজীকে আজীবন উপভোগ করার মতো রোমাঞ্চকর পারফরম্যান্সের সুযোগ করে দেয় কিউইরা। সেঞ্চুরি করেই অনেক সাড়া জাগিয়েছেন চতুর্থ দিন। গতকাল সাগরিকার উইকেটে পরিসংখ্যানবিদদের কাজ বাড়ালেন সোহাগ গাজী বিরল ইতিহাস গড়ে। সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের কীর্তি আগেও অনেকবার দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ২২ বছর বয়সী পটুয়াখালীর এই তরুণ সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের তালিকায় তো নাম লিখিয়েছেনই, সঙ্গে ইতিহাসের বইয়ে নতুন পাতাও সংযোজন করিয়েছেন হ্যাটট্রিক করে। ইনিংসে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক করা বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার এখন সোহাগ গাজী। এই তালিকায় আর কাউকে সঙ্গী হিসেবে সোহাগ কবে পাবেন তা ক্রিকেট বিধাতাই বলতে পারে। কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংসের ৮৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কোরি অ্যান্ডারসনকে এলবির ফাঁদে ফেলেন সোহাগ। দ্বিতীয় বলে বিজে ওয়াটলিং ধরা পড়লেন মুশফিকের গ্লাভসে। হ্যাটট্রিকটি আরও শিহরণ জাগানিয়া। ব্রেসওয়েলের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বলটি গ্লাভস বন্দি করতে পারেননি মুশফিক। বল কোথায় খুঁজছিলেন মুশফিকসহ সবাই। কিন্তু বল মাটিতে পড়ার একটু আগে লেগ স্লিপে থাকা সাকিব মাঠে পড়ে বাড়িয়ে দিলেন এক হাত। আর সাকিবের হাতেই আশ্রয় নিল বলটি। হয়ে গেলও দুরন্ত হ্যাটট্রিক। টেস্ট ক্রিকেটের ৪০তম হ্যাটট্রিক। সোহাগ গাজীর প্রথম। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে দ্বিতীয়। রোমাঞ্চকর ওই হ্যাটট্রিকের পাঁচ ওভার পরই ৭ উইকেটে ২৮৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড। এর আগে দিনের শুরুতে লাঞ্চের আগে ফুলটন ও কেন উইলিয়ামসনকে ফেরান সোহাগ। লাঞ্চের পর ম্যাককালামও সোহাগের বলেই সাজঘরে ফেরেন। পঞ্চম দিনে কিউইদের আউট হওয়া ছয় ব্যাটসম্যানই বাংলাদেশি এই অফ স্পিনারের শিকার। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের পক্ষে ফুলটন ৫৯, রাদারফোর্ড ৩২, উইলিয়ামসন ৭৪, রস টেলর অপরাজিত ৫৪, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ২২ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সোহাগ ৭৭ রানে নেন ৬ উইকেট। নাসির পান ১ উইকেট।

দিনের বাকি অংশে জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ২৫৬ রান। ২০১২ সালের নভেম্বরে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ দিনে ২৪৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশ ১৬৭ রানে অলআউট হয়ে হেরে গিয়েছিল। অনেকের মনে শঙ্কা থাকলেও চট্টগ্রামে আর সেই ভূত টাইগারদের ওপর ভর করেনি। বেশ সাহসিকতা ও আনন্দ চিত্তেই দিনটা পাড়ি দিয়েছে মুশফিক বাহিনী। ৪৮.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৭৩ রান তোলে বাংলাদেশ। তামিম-এনামুলের ৩৯ রানের ওপেনিং জুটি বিচ্ছিন্ন হয় এনামুল আউট হলে। ১৮ রান করে এনামুল বাইরে বল চালাতে গিয়ে ক্যাচ দেন মার্টিনের বলে। তামিম-মার্শাল দ্বিতীয় উইকেটে ৬০ রান যোগ করেন। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া তামিম দলীয় ৯৯ রানে মার্টিনের দ্বিতীয় শিকার হন। তিনি ৪৬ রান করেন। এক রান পরই অভিষিক্ত মার্শাল আইয়ুব ৩১ রান করে সোধির বলে সাজঘরে ফেরেন। বাকি সময়ে ৭২ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন সাকিব ও মমিনুল। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মমিনুল ২২ রানে অপরাজিত থাকলেও সাকিব তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ সেঞ্চুরি। সোধির বলে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। এরপরই দিনের খেলা শেষ করে দেন আম্পায়াররা। সাকিব ৪টি চার ও ৩টি ছয়ে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন।

টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। মমিনুল ও সোহাগের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেন তিনি। ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টেও এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান মুশফিক। চট্টগ্রাম টাইগারদের লাকি গ্রাউন্ড হিসেবেই পরিচিত। এবারও তার প্রদর্শনী টিকে থাকল সাগরিকায়। ভবিষ্যতেও চট্টগ্রামের মাটিতে ভাগ্য দেবীর আশীর্বাদে ধন্য হবে টাইগার বাহিনী এমনটাই ক্রিকেটপাগল বাঙালিদের কামনা থাকবে।

Leave a Reply