সুরুচি সুনীতি ও সুচিন্তার যোগফলই গণতন্ত্র অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ

19/05/2015 1:31 pmViews: 8
সুরুচি সুনীতি ও সুচিন্তার যোগফলই গণতন্ত্র
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ

আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থায় যেসব সমস্যা হঠাৎ করে মাথা উঁচু করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে উদ্যত হয়, সেগুলো সমাধানের জন্যই তো রাজনীতি। সমস্যাকে উসকে দেওয়া নয়। ন্যায়নিষ্ঠ হয়ে, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টি নিয়ে, পরস্পরকে কাছে টেনে নেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত আকাক্সক্ষাই হলো রাজনীতির অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার পূরণ করা গেলে রাজনীতিতে কোথাও মিলবে না সংকীর্ণতা, কোথাও পাওয়া যাবে না স্বার্থপরতা, নীচতা, নোংরামি। এর ব্যত্যয় যেখানে বাসা বাঁধবে, সেখানে আর যাই হোক, রাজনীতি থাকে না। বর্তমানে জাতীয় সংসদে এবং সংসদের বাইরে রাজনীতিকরা যেভাবে পরস্পরের প্রতি বিষোদগার ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করছেন তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারসুলভ নয়। সংকীর্ণতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্রকে সমুন্নত করতে আরও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে রাজনীতিকদের। অন্যদিকে রাজনীতি উন্নত স্তরে উপনীত হয় শুধু গণতন্ত্রের সংস্পর্শে এসে। গণতন্ত্র তো শুধু এক সুসম সামাজিক ব্যবস্থা নয়, নয় শুধু ইনসাফসিক্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থাও। গণতন্ত্র হাজার বছরের কাক্সিক্ষত সাংস্কৃতিক অর্জনও। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরশমণির স্পর্শে ক্ষমতাশ্রয়ী রাজনীতি জনকল্যাণমুখী রাজনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ক্ষমতা অথবা ক্ষমতার ক্লেদ তখন সমাজ পরিবর্তনের মহান দায়িত্বে রূপান্তরিত হয়। গণতন্ত্র তাই এত কাক্সিক্ষত। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতি পরিচালনার জন্য এমন নেতৃত্ব দরকার, যা আকাশের মতো উদার, সমুদ্রের মতো গভীর, সর্বংসহা মাটির মতো সহিষ্ণু। প্রফেসর ইরাজিম কোহাকের ভাষ্যে- ‘গণতন্ত্র হলো পরিপূর্ণতার, অসম্পূর্ণতার নয়। গণতন্ত্র হলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের, সংঘাত বা সংঘর্ষের নয়। গণতন্ত্র হলো আদর্শের, লোভের নয়।’ দার্শনিক ডিইয়ি আমাদের শিখিয়েছেন- ‘গণতান্ত্রিক চেতনাকে লালন করতে হবে প্রত্যেককে যত্নসহকারে, আন্তরিকতার সঙ্গে। তার পরই শুধু সামাজিক ব্যবস্থায় এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে।’ সুরুচি, সুনীতি ও সুচিন্তার যোগফলই গণতন্ত্র। সংসদে তো বটেই সংসদের বাইরেও এ তিনের চর্চা থাকা উচিত রাজনীতিকদের মধ্যে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যাহত হয় জনজীবন, আহত হয় জনমন এবং নিহত হয় সুশাসন। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্র মানেই হলো অর্থনৈতিক অগ্রগতি, কেননা গণতন্ত্র মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা জাগ্রত করে। অগ্রসর হওয়ার প্রত্যয় সৃষ্টি করে।

Leave a Reply