সুন্দরবন ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো লংমার্চ
দ্বিগরাজের জনসভায় জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ ‘সুন্দরবন ঘোষণা’ পাঠ করেন। ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে সুন্দরবন ধ্বংস করার চক্রান্ত সরকারকে বাদ দিতে হবে এবং সুন্দরবন রক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নিয়ে সরকারের ঘোষণার বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ভিত্তিপ্রস্তর জনগণ উপড়ে ফেলবে। আর প্রেসনোট দিয়ে মিথ্যাচার জনগণের কাছে উন্মোচিত করছে আপনাদের প্রতারণা আর মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসার আসল চেহারা।’
রামপালে প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র বাতিল দাবিতে ঢাকা থেকে সুন্দরবন অভিমুখী তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির লংমার্চ সমাবেশ শনিবার বিকেলে দ্বিগরাজ পৌছায়।
এর আগে দুপুরে লংমার্চ বাগেরহাট পৌঁছায়। মংলা রওয়ানা দেয়ার আগে বাগেরহাটের পুরাতন কোট চত্বরে লংমার্চের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. শহিদুল্লাহ বলেন, সুন্দরবন বিনাশী অসম রামপাল বিদ্যুকেন্দ্র চুক্তি অবিলম্বে সরকার বাতিল না করলে এর সঙ্গে সরকারের যেসব কর্তাব্যক্তি জড়িত প্রয়োজনে গণআদালত বসিয়ে তাদের বিচার করা হবে।
তিনি বলেন, এই বিদ্যুকেন্দ্র চালু হলে প্রতিদিন ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার-ডাই-অক্সসাইড, ৮৫ টন নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সসাইড ও ২ হাজার ৬০০ টন কয়লা পোড়া ছাই ভস্ম তৈরি হবে। এছাড়া এলাকায় হবে এসিড বৃষ্টি। বিদ্যুকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র কনিকা, মারকারি বা পারদ, ক্রোমিয়াম, তেজক্রিয় ইউরোনিয়াম, থোরিয়াম, বিষাক্ত আর্সেনিক ও শেলেনিয়ামসহ পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান র্নিগত হবে। এতে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে সুন্দরবন।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে সুন্দরবন ধ্বংস করে ৫০ ভাগ লাভ কোনো রয়েলটি ছাড়াই তার দেশে নিয়ে যাবে। জাতীয় স্বার্থে অসম এ চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। তা না হলে আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের মাত্র ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ও ল্যান্ডস্কেপ জোনে এ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
বাগেরহাট জেলা তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক রনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স, সৈয়দ আবু জাফর, ওয়ারকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খলিকুজ্জামান, শুধংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট নেতা আজিজুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ারকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রীক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু প্রমুখ।
এর আগে শনিবার সকালে ভারী বৃষ্টির মধ্যেই খুলনার হাদিস পার্কে সমাবেশ শেষে বাগেরহাটের উদ্দেশে রওনা হয় লংমার্চকারীরা। সুন্দরবন বাঁচাতে শনিবার সকালের এই সমাবেশে বৃষ্টি উপেক্ষা করে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ।
গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রস্তাবিত বিদ্যুেকন্দ্র বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পাঁচ দিনব্যাপী এই লংমার্চ শুরু হয়।