সালাহউদ্দিনকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি খালেদার
সালাহউদ্দিনকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি খালেদার
বিএনপির নিখোঁজ যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া বলেন, আমি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করছি, বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। শেখ হাসিনার লাগাতার দুই আমলে বিএনপি’র অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম, সাবেক এমপি ও লাকসাম বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজ এবং ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও সিলেটের ছাত্রনেতা ইফতেখার আহমদ দিনারসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মীকে গায়েব করে ফেলা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদেরকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিনেও তাদের আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। জানা যায়নি তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গুম করে ফেলা এসব নেতাকর্মী ও নাগরিকদের স্বজনেরা তাদের প্রিয়জনের ফিরে আসার প্রত্যাশায় উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন। তারা জানেন না তাদের নিখোঁজ স্বজনেরা আটক অবস্থায় বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছেন কি-না। খুনের শিকার হয়ে থাকলে সেই খুনের বিচার দূরে থাক, লাশটি পর্যন্ত তারা পাননি। জানতে পারেননি মৃত্যুর তারিখটিও। সুযোগ পাননি প্রিয়জনের লাশ দাফন, কবর জিয়ারত কিংবা মৃত্যু দিবসে দোয়া খায়ের ও মাগফিরাত কামনা করার। খালেদা জিয়া বলেন, এই পটভূমিতে সালাহউদ্দিনের জন্য তার পরিবারের এবং আমাদের সবার উৎকণ্ঠা দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে। আমরা বারবার তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করে আসছি। তার স্ত্রী, সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার আবেদন করছেন তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সালাহউদ্দিনকে নিয়ে নিষ্ঠুর কটাক্ষ করলেও তাকে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো উদ্যোগ নেননি। সালাহউদ্দিনের বিষয়ে তার স্ত্রী থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়া হয়নি। যদিও পুলিশ নিজে থেকে একটা জিডি করেছে। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও তার সন্ধান আজও দেয়া হয়নি। সালাহউদ্দিন বিএনপি’র মতো একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নাগরিককে দীর্ঘদিন গায়েব করে রেখে যদি সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন নির্বিকার থাকতে পারে তাহলে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়? দেশে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিকতা কি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে? কাউকে কি কখনও কোনও কিছুর দায় নিতে বা জবাবদিহি করতে হবে না ? খালেদা জিয়া বলেন, আমি আবারও দাবি জানাচ্ছি, সালাহউদ্দিনকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হোক। সকল নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পাবার সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। সর্বস্তরে স্বেচ্ছাচারিতার বদলে আইনের শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক রীতি-নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হোক। আইনের প্রয়োগ, তদন্ত ও বিচারিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি ফিরিয়ে আনা হোক।
সালাহউদ্দিনের বাসায় মঈন খান
এদিকে বিকালে সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবারকে সান্ত¡না জানাতে তার গুলশানের বাসায় যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এসময় তিনি সংবাদিকদের বলেন, সরকারের কল্পিত অপরাধের জন্য আজকে দেশে এ ধরনের অপরাধ হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে একাধিক শীর্ষ নেতাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রেখেছে। এতদিন হলো সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু সরকারের আচরণ দেখে মনে হয় না, এ বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অথচ রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। মঈন খান বলেন, আমরা আমাদের রাজনৈতিক সহকর্মীকে ফিরে পেতে চাই। সন্ধানের অপেক্ষায় ধীর আগ্রহে বসে আছি। বিদেশী রাষ্ট্রদূতরাও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখনও কোন সুরাহা পাচ্ছি না। সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। দুই মাস হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত তার কোন হদিস পাচ্ছি না। তাকে ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে আছি। তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর আজ পর্যন্ত সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করা হয়নি। আমার আর কিছুই বলার নেই। আমি শুধু আমার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফেরত চাই। রাজনৈতিক দিক নয়, মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও তাকে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান তিনি।