সাবেক এক উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে দায়ের করা মামলা থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে অব্যাহতি দেয়ার কথা চিন্তা করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন।
সাবেক এক উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে দায়ের করা মামলা থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে অব্যাহতি দেয়ার কথা চিন্তা করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন।
মামলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইনি দলিলপত্র নিরীক্ষণ ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও ব্লুমবার্গ।
এর আগে, গত আগস্টে ওয়াশিংটনের ফেডারেল কোর্টে বর্তমানে কানাডায় নির্বাসিত সাবেক সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবরি তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন।
খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইন বিভাগ মোহাম্মদ বিন সালমানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সৌদি অনুরোধ বিবেচনা করছে। তারা মামলার তদন্তের ফলাফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেও’র কাছে উপস্থাপন করবে, যার ভিত্তিতে তিনি বিচার বিভাগকে সৌদি অনুরোধের বিষয়ে সুপারিশ করবেন।
সৌদি আরব আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের বিদায়ের আগেই এ বিষয়টির সমাধান চাচ্ছে। কেননা শপথ নিতে যাওয়া নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি আরব সম্পর্কে মনোভাব ট্রাম্পের তুলনায় কঠোর।
এ মামলায় মোহাম্মদ বিন সালমানকে অব্যাহতি দেয়া যুক্তরাষ্ট্রে তার বিরুদ্ধে আনা অন্য মামলাগুলোকে দুর্বল করে দেবে বলে খবরে মন্তব্য করা হয়। এসব মামলার মধ্যে অন্যতম ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার আদেশের অভিযোগ।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে মামলায় সাদ আল-জাবরি অভিযোগ করেন, সৌদি যুবরাজ তাকে অনুসরণ করার জন্য লোক নিয়োগ করেন এবং পরে তাকে হত্যার জন্য ঘাতকদের একটি দল প্রস্তুত করেন।
আল-জাবরি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সৌদি ঘাতক দল তাকে হত্যার জন্য কানাডায় হাজির হয়েছিলো কিন্তু সীমান্তে কানাডীয় কর্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেয়।
আল-জাবরি বলেন, সৌদি রাজদরবারের অভ্যন্তরে যুবরাজ মোহাম্মদের গোপন রাজনৈতিক পরিকল্পনার স্পর্শকাতর তথ্যের পাশাপাশি তার ব্যবসায়িক লেনদেন এবং সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার জন্য ঘাতকের দল প্রস্তুতের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে তিনি অবগত।
অপরদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ আল-জাবরির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে।
এদিকে এ সংবাদের প্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের সৌদি দূতাবাস এবং সৌদি সরকারের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করে ইমেইল করা হলেও তারা এখনো পর্যন্ত এর কোনো উত্তর দেননি। অপরদিকে সৌদি সরকারের পক্ষের আইনজীবীরাও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় প্রেস বিভাগকে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। তবে এর আগে এক মুখপাত্র জানান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আল-জাবরি একজন সম্মানিত ও মূল্যবান সহযোগী, যিনি আমেরিকান ও সৌদিদের জীবন রক্ষা করেছেন।
আল-জাবরির আইনজীবীরা কোনো প্রকার মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে আল-জাবরির পরিবার জানায়, সৌদি যুবরাজকে মামলা থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তে যেন তাড়াহুড়ো করা না হয়।
সাদ আল-জাবরির ছেলে খালিদ আল-জাবরি ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘এমবিএসকে (মোহাম্মদ বিন সালমান) অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত বাকিগুলোর উপরও এর প্রভাব ফেলবে, এমনকি এটা বাইডেন প্রশাসনের হাতে পড়লেও।’
তিনি বলেন, ‘এটি কোনো তাড়াহুড়োর রাজনৈতিক প্রশ্রয় হওয়া উচিত হবে না। এমবিএসকে অব্যাহতি দান চূড়ান্ত মাত্রার দায়বদ্ধতা থেকে তাকে মুক্তি দেবে এবং তিনি একে খুনের জন্য মার্কিনি লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করবেন।’
তবে মাইক পম্পেও তার পদত্যাগের আগে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা, তা এখনো অজানা।
ক্ষমতায় আসার পরপরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করেন। তার প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে সৌদি আরবের কাছে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র বিক্রি এবং খাশোগি হত্যাকে গুরুত্বহীন করে বিবেচনার প্রয়াস চালান ট্রাম্প। তার জামাতা জ্যারেড কুশনার সৌদি যুবরাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনায় তারা নিয়মিত আলোচনা-পরামর্শ করতেন।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় সৌদি আরবকে ’প্রত্যাখ্যাত’ হিসেবে প্রচারণা করা জো বাইডেন ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের নীতির বিপরীতে চলবেন। তবে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে থাকবে বলে জানান তিনি।
মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক উভয় দলের সদস্যরাই সৌদি যুবরাজকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অব্যাহত সমর্থন দিয়ে আসার সমালোচনা করে আসছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ পরিস্থিতিতে মার্কিন সরকার এ ধরনের সুপারিশ বিবেচনায় সতর্ক থাকে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে কাজ করা আইনি উপদেষ্টা ব্রায়ান এগান বলেন, ‘মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের এধরনের বিবেচনা অস্বাভাবিক। সাধারণত প্রশাসন ও বিচার বিভাগ মামলা আপিল আদালতে পৌঁছার আগে এ ধরনের হস্তক্ষেপ করা থেকে দূরে থাকে।’
সূত্র : ব্লুমবার্গ ও ওয়াশিংটন পোস্ট