সাত বিভাগ ও কেন্দ্রে নির্বাচন মনিটরিং টিম করবে বিএনপি

পৌর নির্বাচন পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলসহ ৭ বিভাগে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
বৈঠকে স্থানীয়ভাবে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত হয়। কোনো পৌরসভায় স্থানীয়ভাবে সমাধান না করতে পারলে তা কেন্দ্রে জানাতে বলা হয়েছে। পৌরসভার আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পর কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে এর মদদদাতাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এক বছরের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় গুলশানের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক বসে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে পৌর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয় গতবছরের ১৩ নভেম্বর।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সারোয়ারী রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের কৌশল নিয়ে শনিবার দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন খালেদা জিয়া।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পৌর নির্বাচন পরিচালনায় প্রত্যেকটি বিভাগে কেন্দ্রীয় একজন ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম হবে। স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি বিভাগীয় কেন্দ্রীয় নেতারাও ওই টিমে থাকবেন। আর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানকে সদস্য সচিব করে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম করার সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচনের আগে ফখরুল চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়কে ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হতে পারে।
বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গে প্রার্থিতা ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি না হলে তালিকা দেখে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শনিবারের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে বিদ্রোহীদের প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য রাজবাড়ী ও নাটোরের দুটি পৌরসভার কথা উল্লেখ করে জানান, প্রার্থী বাছাইয়ে কিছু দুর্বলতা ছিল। তাই বিদ্রোহীদের ব্যাপারে শুরুতেই কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এ প্রসঙ্গে জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীদের যেসব কেন্দ্রীয় নেতা মদদ দিচ্ছে তাদের তালিকা খালেদা জিয়া তার কাছে জমা দিতে বলেছেন। যেসব কেন্দ্রীয় নেতা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না ভবিষ্যৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে বলে হুশিয়ারি দেন খালেদা জিয়া।
এদিকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির আশংকার, পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। যেহেতু বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য অংশগ্রহণ করছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি গ্রেফতার হয়েছে। সব মিলে গত এক মাসে গ্রেফতার ৫ হাজারের উপরে। সভা মনে করে, এই গণগ্রেফতার বন্ধ করা না হলে এবং গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া না হলে কোনোমতেই নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
স্থায়ী কমিটির মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টুসহ রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন কিছু কিছু পৌর সভায় জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও কিছু পৌর সভায় ইউএনওকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়েছে। অথচ এই নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সচিবালয়ে কর্মকর্তার সংকট রয়েছে তাও নয়। জনপ্রশাসনে চরম দলীয়করণে পৌর নির্বাচন কারচুপির পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এ রির্টানিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বৈঠকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবার আহ্বান জানানো হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়, নির্বাচন কমিশনের বিধির নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন এবং মন্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করছেন।