সারাদেশে সংঘর্ষ, গুলি, নিহত ১০
প্রথম বাংলা ডেস্ক : নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে ঢাকায় ১৮ দলের সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলা পর্যায়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যেমন ছিলেন বেপরোয়া তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ছিল কঠোর অবস্থানে। অনেক জায়গাতেই ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। রাত ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে কমপক্ষে ১০জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিবাদে কোথাও শনিবার হরতাল ডেকেছে ১৮ দল।
কক্সবাজারে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিছিল করার সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের গুলিতে বিএনপির তিন কর্মী নিহত হয়েছে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে চাঁদপুরে যুবদলের তিন নেতা ও নীলফামারীতে শিবির পুলিশ সংঘর্ষে শিবির কর্মী নিহত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের চকরিয়া, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ও নীলফামারীর জলঢাকায়এ সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অধর্শত লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতরা হলেন- কক্সবাজারের চকরিয়ার বিএনপি কর্মী বাদশা মিয়া (৩০), মিজানুর রহমান (২৫) ও শাহেদ (৩৫), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি জাঙ্গাগীর (৩২), বারপাইকা গ্রামের যুবদল নেতা আরিফ(২৩) ও গাজীপুর গ্রামের যুবদল নেতা শরীফ(২৫), নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা সদরের শিবিরকর্মী মোসলেম উদ্দিন (১৯)।
এদিকে, নেতাকর্মীদের নিহতের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফরিদগঞ্জে যুবদলের তিন নেতা নিহতের প্রতিবাদে শনিবার সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গদল।
অপরদিকে, যে কোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
কক্সবাজার: বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চকরিয়ার চিড়িঙগা বাজারে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে বিজিবি সদস্যরা। গুলিতে বিএনপির তিন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
এসময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে অর্ধশত নেতাকর্মী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ তিন কর্মীকে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চকরিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র হায়দার আলী দাবি করে বলেন, বিজিবির গুলিতে বাদশা মিয়া (৩০), মিজানুর রহমান (২৫) ও শাহেদ (৩৫) নামে বিএনপির তিন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক সহিংসতা এড়াতে বৃহস্পতিবার থেকে চকরিয়া বাজারে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরণের সভা-সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করে। তবে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চকরিয়া চিড়িঙ্গা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজিবি সদস্যরা ওই মিছিলে বাধা দেয়ার এক পর্যায়ে গুলিবর্ষণ করে। এসময় মিছিলে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় ঘটনাস্থলেই বাদশা, মিজানুর ও শাহেদ নিহত হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ আরো তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়।
বিএনপি কর্মী নিহতের ঘটনায় পুরো চকরিয়া বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিজিবি-বিএনপি নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এসময় মিছিলকারীদের ওপর গুলি চালায় বিজিবি। এতে অন্তত অর্ধশত লোকজন গুলিবিদ্ধ হয়।
চকরিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি হায়দার আলী জানান, নিহতদের লাশ বিজিবি নিয়ে গেছে।
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): বিকেলে চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের আল-মদিনা হাসপাতালের সামনে বিএনপি-জামায়াত, পুলিশ ও আওয়ামীলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে যুবদলের তিন নেতার মৃত্যু হয়েছে। এসময় শতাধিক লোকজন গুলিবিদ্ধ হয়।
নিহতরা হলেন- পাইকপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি জাঙ্গাগীর (৩২), বারপাইকা গ্রামের যুবদল নেতা আরিফ(২৩) ও গাজীপুর গ্রামের যুবদল নেতা শরীফ(২৫)। তবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কর হচ্ছে।
আহতদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার, শরীফ, আরিফসহ বেশ কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের প্রায় তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের আল-মদিনা হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের সামনে এলে পুলিশ সেখানে অবস্থান নিতে গেলে পেছন থেকে শিবিরের কর্মীরা প্রথমে লাঠি ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
পুলিশ প্রথমে মিছিলটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। পরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে টিয়ারশেল গ্যাস ও পরে গুলিবর্ষণ করে। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত শতাধিক লোক আহত হয়। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ যুবদল নেতা আরিফের মৃত্যু হয়। এসময় অপর একজন গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায়।
সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুইজনকে আটক করেছে।
রংপুর: শুক্রবার বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা সদরে পুলিশের সাথে জামায়াত শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষে মোসলেম উদ্দিন (২২) নামে শিবির নেতা নিহত হয়েছে। এসময় গুলিবিদ্ধ ১০ জনসহ দুই পক্ষে আহত হয়েছে অর্ধশত। গুলিবিদ্ধ ৬ শিবিরকর্মীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেলে বাসস্ট্যান্ড থেকে জামায়াত শিবির কর্মীরা মিছিল নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৮৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে এক পর্যায়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে ছাত্র শিবির নেতা মোসলেম উদ্দিনসহ ১০ শিবির কর্মী গুলি বিদ্ধ হয়।
এদের মধ্যে সাত জনকে রমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মোসলেমকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় শিবির কর্মীরা মোসলেমের লাশ নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে চলে যায়।
গুলিবিদ্ধ অপর ৬ শিবির কর্মী এনামুল, রাবু, আশরাফুল, ওয়াহেদুল ইসলাম, স্বপন ও রবিউল ইসলাম বর্তমানে রামেক হাসপাতালের ১৫ নম্বর সার্জিকেল ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ১৮ দলের মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন। আজ (শুক্রবার) সকাল ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারিতে মিছিল বের করে ১৮ দলীয় জোট। মিছিলটি পূর্বকাশিমারি বাজার এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হোসেন ও সবুর মোল্লার নেতৃত্বে একটি গ্র“প ১৮ দলের মিছিলে হামলা চালায়। প্রতিপক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জামায়াতকর্মী শফিকুল ইসলাম। জামায়াত কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শ্যামনগর থানার ওসি সগীর মিয়া বলেছেন, ‘জামায়াতকর্মী স্ট্রোকে মারা গেছেন। এখানে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ওসি আরো বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে নিহতরে পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌর শহরে ১৪৪ ধারা বলবত থাকায় শুক্রবার শহরের বাইরে ও বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। সকালে সাতক্ষীরা পৌর শহরের উপকণ্ঠ কদমতলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ও একটি ট্রাক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বাউফল : বরিশালের বাউফল উপজেলায় পুলিশের সাথে সহিংসতায় সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সাইফুলের মৃত্যুকে হৃদরোগ জনিত বলে জানিয়েছেন।