সাক্ষাৎকারে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আশা করি নতুন ইসি নিরপেক্ষ হবে

এ সময় দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশন গঠন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে উপনির্বাচন, বাল্য বিবাহরোধে আইনের ফাঁকফোকর বিষয়ে সমালোচনা, আগামী নির্বাচনে জাপার প্রার্থী বাছাইসহ নানা প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে খোলামেলাভাবে কথা বলেন জাপা চেয়ারম্যান।
এক প্রশ্নের জবাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, আমি বার বার বলছি যারা সার্চ কমিটিতে আছেন তারা ভালো ব্যক্তি। তাদের ব্যাপারে কোনো বিতর্ক নেই। এদের উদ্যোগে আগামীতে নতুন নির্বাচন কমিশন আগের চেয়ে ভালো হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সার্চ কমিটির কাছে যাদের নাম এসেছে, বা শোনা যাচ্ছে তারা দেশের জ্ঞানীগুণী ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। এদের ব্যাপারে বিতর্ক করা যাবে না। সরকার সিইসির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, নতুন সিইসি যিনি হবেন তার অধীনে প্রথম নির্বাচন হবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। সম্প্রতি সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত আওয়ামী লীগের এমপি লিটনের আসনে উপনির্বাচন করবে ইসি। নতুন ইসি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে কিনা তা প্রমাণ হবে সুন্দরগঞ্জ নির্বাচনের মাধ্যমে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ওই নির্বাচনে প্রমাণ হবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ কিনা। মেরুদণ্ডহীন কমিশন গঠন হলে দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন ইসি নিরপেক্ষ হবে।
বৃহত্তর রংপুরের সাংগঠনিক সফর শেষ করে ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকা ফেরেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ৩১ জানুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনে জাপার এক সমাবেশে পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারীকে হাত তুলে প্রার্থী ঘোষণা করছেন জানিয়ে এরশাদ বলেন, সারাদেশে জেগে উঠেছে মানুষ, তারা পরিবর্তন চায়, মানুষ দুই দলকে আর ক্ষমতা দেখতে চায় না। আর পরিবর্তনের জন্য এরশাদের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
শত ব্যস্ততার মাঝেও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দ্রুত বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য সারাদেশে জাপার তিনশ’ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নতুন প্রার্থীদের খোঁজে সারাদেশে চলতি মাস থেকে জেলায় জেলায় সফর করবেন জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, যোগ্যতা, প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, জনসমর্থন দেখে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া হবে।
এবিসি ও ডি ক্যাটাগরিতে প্রার্থীদের খসড়া তালিকা করছেন জানিয়ে এরশাদ বলেন, দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক জেলায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে জাপাকে আবারো তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে এরশাদ বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে আমরা প্রাদেশিক সরকার করব। এই সরকার দিয়ে আমরা উপকৃত হইনি, নিষ্পেষিত হয়েছি। এভাবে দেশ চলতে পারে না। তাই প্রাদেশিক সরকার চাই।
সাক্ষাৎকারে উপজেলা ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গ করে সেখানে ফের গুচ্ছগ্রাম ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এরশাদ বলেন, এখন যা আছে, তাতে উপজেলা শাসন করেন ইউএনও। আমরা উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করব। কারণ আমরা চাই জনগণের নেতা জনগণকে শাসন করবে।
বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সমাজে দেদারসে চাঁদাবাজি চলছে, জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারকে কঠোর হতে হবে। বাল্য বিবাহ রোধ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, এখন নারী নির্যাতন অহরহ হচ্ছে। বাল্যবিবাহ বিধানে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। গ্রামের মেয়েরা অরক্ষিত জানিয়ে এরশাদ বলেন, এ ব্যাপারে আইন করতে হবে।
আগামীতে ক্ষমতায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে মহাসড়কে ডিভাইডার নির্মাণ এবং সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে জানিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, জাতীয় পার্টির জন্য আমার জীবনকে মৃত্যু পর্যন্ত উৎসর্গ করেছি।