সাকার পক্ষে ৪ পাকিস্তানিসহ ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে রিভিউ শুনানিতে ৪ পাকিস্তানি নাগরিকসহ ৭ জন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন জানানো হয়। সাকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান আল ফেসানী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাত সাক্ষীর মধ্যে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরো, পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী ইশাক খান খাকওয়ানি, ফিজিতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিকের নাম রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও তার মা সাকার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
গত ১৪ অক্টোবর সাকার পক্ষে তার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন।
ওইদিনই আলজাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাকা চৌধুরীরর পক্ষে চার পাকিস্তানি নাগরিকসহ ৫ বিদেশী নাগরিক সাফাই সাক্ষী দিতে আগ্রহী। `Pakistanis ask to testify in Bangladesh war-crimes case’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনটি লিখেছেন বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পাঁচ নাগরিক হলেন- মোহাম্মদ মিয়ান সোমরু যিনি ২০০৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী ইশাক খান খাকওয়ানি, ডন মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারপারসন আম্বার হারুন সাইগল। এছাড়া অন্য দুজন ব্যবসায়ী।
তারা মনে করেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে তৎকালীন ঘটনার ব্যাপারে প্রকৃত সাক্ষ্য দিতে পারলে তাকে দণ্ডাদেশ মুক্ত করা সম্ভব।
তাদের দাবি, ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী করাচিতে অবস্থান করছিলেন। তাই যেসব অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এর দায় তার ওপর যায় না।
তারা বলেন, এর আগেও ট্রাইব্যুনালে নিজেরা তাদের প্রমাণ দাখিল করার আশা করেছিলেন। কিন্তু সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে মাত্র পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়। এ কারণে তারা শপথ হলফনামার একটি খসড়া আদালতে উপস্থাপন করেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ এগুলোকে অগ্রহণযোগ্য বলে বাতিল করে দেয়।
পোশাক ব্যবসায়ী মুনীব আর্জমান্দ খান দাবি করেছেন, তার সাক্ষ্য আদালতের পুরো প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করে দেবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ করাচি বিমানবন্দরে এক বন্ধুর কাছ থেকে সালাউদ্দিন কাদেরকে নেন। তাকে হারুন পরিবারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি তিন সপ্তাহ অবস্থান করেন।
এরপর পড়াশুনা করার জন্য বিমানে করে লাহোরে চলে যান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আমরা যা বলছি তা সত্য, দাবি করেন আর্জমান্দ খান।
১৯৭১ সালে আম্বার হারুন সাইগলের বয়স ২০ বছর ছিল। তিনি বলেন, যদি আদালত অনুমতি দেয় তবে কারো জীবন বাঁচানোর জন্য আমি বাংলাদেশে এসে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
২০০৭ সালে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোহম্মদ মিয়ান সোমরু বলেন, ন্যায়বিচারের জন্য সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত হতে দেয়া উচিত। আমি যে কোনো সময় শপথ নিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত।
ফাঁসির রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রিভিউ দায়ের করেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে (অভিযোগ নং- ৩, ৫, ৬ ও ৮) তাকে ওই শাস্তি দেয়া হয়। এছাড়া তিনটি (অভিযোগ নং- ২, ৪ ও ৭) অভিযোগে তাকে ২০ বছরের ও দুটি (অভিযোগ নং- ১৭ ও ১৮) অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলেও মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে তার মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। এরপর দুজনের রায়েরই পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি একসঙ্গে আসে ট্রাইব্যুনালে। ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেয়া হয়।
এরপর নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিন শেষ হওয়ার আগের দিন রিভিউ আবেদন করেন সাকা চৌধুরী। একই দিন রিভিউ করেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। রিভিউ খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করতে হবে সাকা চৌধুরীকে।