সাংসদের ভাইকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা
প্রতিবেদক, রাজশাহী :
রাজশাহীর পুঠিয়ায় আওয়ামী লীগের সাংসদ কাজী আবদুল ওয়াদুদের চাচাতো ভাই আমিনুল ইসলামকে (২৯) গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার গভীর রাতে উপজেলার বিড়ালদহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আমিনুলের বাবার নাম ওয়াজেদ শেখ। তিন ভাইয়ের মধ্যে আমিনুল সবার ছোট। বিড়ালদহ গ্রামের ইয়াকুব আলী নামের একজনের বাড়িতে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তিনি একাই থাকতেন। সেখানেই ওই হত্যার ঘটনা ঘটে।
বাড়িওয়ালা ইয়াকুব আলীর স্ত্রী জমেলা বেগম (৫০) জানান, রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে আমিনুলের গোঙানির শব্দ পেয়ে তিনি নিজের ঘরের দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন, বাইরে থেকে দরজা আটকানো। এরপর জানালা খুলে দেখেন, আমিনুল ঘরের বারান্দায় রক্তাক্ত অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছেন। কী হয়েছে, জানতে চাইলে আমিনুল তাঁকে বাঁচাতে বলেন। ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ থাকার কথা জানালে আমিনুল নিজেই হামাগুড়ি দিয়ে এসে দরজা খুলে দেন। জমেলা বলেন, ওই অবস্থায় তাঁকে দেখে তিনি চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন।
আমিনুলের চাচাতো ভাই আবদুস সবুর জানান, গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে আমিনুলকে রাত তিনটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দ্রুত অস্ত্রোপচার শুরু হয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের সময়ে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি মারা যান।
আবদুস সবুর আরও জানান, দুর্বৃত্তরা আমিনুলকে জবাই করার চেষ্টা করে, কিন্তু মাথা কেটে পড়ে যায়নি। ঘাড়ের দিক থেকেও কেটে মাথা বিছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়। তাঁর বাঁ হাতের কবজি পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া শরীরের অনেক জায়গায় কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
গতকাল সকালে বিড়ালদহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আমিনুলের ঘরের বারান্দা ও মেঝেতে রক্ত পড়ে রয়েছে। আমিনুল তাঁর রক্তমাখা হাত দিয়ে যে ছিটকিনি খুলেছেন, তাতেও রক্ত লেগে আছে। বাড়ির লোকেরা জানান, কাটা হাতটা আলামত হিসেবে পুলিশ নিয়ে গেছে। এ ঘটনার জন্য তাঁরা কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাংসদ আবদুল ওয়াদুদ জানান, খবর পেয়ে রাতেই তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এরপর তাঁর গাড়িতে করেই আমিনুলকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘আমিনুল খুবই সহজ-সরলপ্রকৃতির এবং আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই বিপক্ষের রাজনৈতিক দলের কর্মীরা তাকে হত্যা করেছে।’ বিপক্ষ দল বলতে তিনি বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের কথা উল্লেখ করেন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়দা খান জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ঠিক কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা এখনই বলা যাবে যাচ্ছে না। থানায় এখনো কোনো অভিযোগও আসেনি। বিষয়টি তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে।