সাংবাদিক অধরাকে হয়রানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে ১৯ সংগঠনের চিঠি

31/08/2023 5:47 pmViews: 3

mzamin

facebook sharing button

সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিনকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন বন্ধে অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক দেশি বিদেশি ১৯টি সংগঠন। রাজারবাগ দরবার শরীফ নিয়ে আরটিভিতে ২৯শে এপ্রিল ভিডিও রিপোর্ট করার জন্য তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে তদন্ত করা হচ্ছে। ওই চিঠিতে এসব সংগঠন বলেছে, ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে তদন্ত অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত কর্তৃপক্ষের। ৩০শে আগস্ট এই চিঠি ইস্যু করা করা হয়েছে। তা প্রকাশ হয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টে (সিপিজে)। এতে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার হাসিনা’ সম্বোধন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মধ্য জুলাই থেকে বেআইনিভাবে ইয়াসমিনের ওপর নজরদারি করছে রাজারবাগ দরবার শরীফের সদস্যরা। এ রিপোর্ট পেয়ে আমরা হতাশা প্রকাশ করছি। তারা তাকে অব্যাহতভাবে অনুসরণ করছে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ফাইল করার হুমকি দিচ্ছে।

এমনকি রিপোর্টিংয়ের কারণে তিনি ও তার পরিবারকে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে দ্রুততার সঙ্গে এসব হুমকির বিষয়ে তদন্ত করতে হবে। এর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে। ইয়াসমিনের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চিঠিটির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন ও বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন কামাল উদ্দিন আহমেদের কাছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, আর্টিক্যাল ১৯ সাউথ এশিয়া, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড এলায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, কোয়ালিশন ফর ওমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফোরাম ফর ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন বাংলাদেশ, ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড, আইএফইএক্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস, ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন, পেন আমেরিকা, পেন বাংলাদেশ, পেন ইন্টারন্যাশনাল ও রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্স।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিক ও তার সহযোগী আকরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তদন্ত বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি। এই মামলায় কাঞ্চনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে রাজারবাগ দরবার শরীফের অন্যতম নেতা শাকেরুল কবির আর্থিক মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে স্থানীয়দের সম্পত্তি দখল করেছেন বলে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকের রিপোর্টে একজন সূত্রের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিশোধ নেয়া হলো ভীতি প্রদর্শন, যা মুক্ত সাংবাদিকতার কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করে। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। ভীতিহীন পরিবেশে, প্রতিপক্ষ বা কর্তৃপক্ষের প্রতিশোধ নেয়ার ভয়মুক্ত পরিবেশে বাংলাদেশে স্থানীয় এবং জাতীয় বিষয়গুলোতে মিডিয়াকে অবাধ ও ক্ষমতা দিতে হবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। তাকে সামনে রেখে এসব বিষয় প্রাসঙ্গিক।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আমরা সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এর পরিবর্তে আসছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। আগে যেসব ধারায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং স্বকীয়তাসহ নিরপেক্ষা সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারের কণ্ঠকে গলাটিপে ধরা হয়েছিল, তা এই আইনেও আছে। আমরা সুশীল সমাজের সংগঠন, সাংবাদিক ও অন্য অংশীদারদের সঙ্গে এ আইন নিয়ে পরামর্শ করতে এবং তাদের মতামতকে এতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করছি, যাতে নতুন এই আইনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড অনুসরণ করে,  বাংলাদেশের সংবিধানের অধীনে নিশ্চিত করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখা এবং সাংবাদিক ও মানবাধিকারের কর্মীদেরকে তাদের কাজ করতে গিয়ে অব্যাহতভাবে অপরাধী হওয়ার ঝুঁকি না থাকে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে সব অভিযোগকে অবিলম্বে বাতিল করা।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে যে ভুল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সমাধানের মধ্য দিয়েই আপনার প্রশাসন কাজ শুরু করতে পারে। ১৩ই মে শাকেরুল কবির চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে ইয়াসমিন ও তার সহযোগী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারা লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ দায়ের করেন। এর ফলে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয় পুলিশকে। কিন্তু মামলার বিষয়টি জানতে ইয়াসমিনের সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস। এরপই গত ৮ই জুলাই তাকে তেজগাঁও পুলিশ স্টেশনে ডাকা হয়। তিনি শুধু তখনই বিষয়টি জানতে পারেন। ততক্ষণে তদন্তের দায়িত্ব চলে গেছে নোয়াখালী ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে। মে মাসে কাঞ্চনকে অভিযুক্ত করে আলাদা একটি মামলায় জেল দেয়া হয়।

Leave a Reply