সহিংসতামুক্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। চায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী দেখতে। মৌলিক মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হোক, সেই প্রত্যাশা ওয়াশিংটনের। সাংবাদিকদের জন্য ভীতিমুক্ত পরিবেশে কাজ করার নিশ্চয়তা চায় বাইডেন প্রশাসন। উৎসাহিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপকে।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া।

তিনি বলেন, ‘বুধবার আমরা বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশের সাক্ষী হয়েছি। সৌভাগ্যবশত এ সমাবেশে গুরুতর সহিংসতা হয়নি। আমি মনে করি এটি ভালো একটি বার্তা, আমরা এ রকম সহিংসতামুক্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখতে চাই।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন উজরা জেয়া। বৈঠকের পর দু’পক্ষই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে উজরা জেয়া বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সব মন্ত্রীর কাছ থেকে অবাধ, স্বচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার শুনেছি। আমাদের বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করা। আমরা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে এটি নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করতে চাই।’

নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অংশীদারিত্বের গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ আমি বাংলাদেশে এসেছি। সেই সঙ্গে আরও সমৃদ্ধ, সংযুক্ত ও সুরক্ষিত একটি মুক্ত ও অবাধ ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনে এ অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরতে চাই। ফলে বিষয়টিকে যেভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেভাবে চিত্রিত করব না।’

দুই প্রধান দল নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই দিকে, এমনকি তারা সংলাপে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চাইলে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘আমরা সবাই সংলাপের পক্ষে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে উজরা জেয়া বলেন, জোর করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব আবারও নিশ্চিত করেছেন। মার্কিন এ কূটনীতিক বলেন, ২০১৭ থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২১০ কোটি ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আরও ৭৪ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করছে, যা মিয়ানমার ও বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা পাবেন। অন্যান্য দাতা ও সম্ভাব্য দাতার রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘নিরাপদ, সম্মানজনক এবং স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি। প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ বর্তমানে নেই।’

উজরা জেয়া বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে আলোচনা হয়েছে সাংবাদিকরা যাতে প্রতিশোধের ভয় ছাড়া এবং ভয়মুক্ত পরিবেশে খবর পরিবেশন করতে পারেন। এ ছাড়া মানবপাচার, নাগরিক সমাজের তৎপরতা, মৌলিক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংগঠনের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অংশগ্রহণ, নির্বাচন এবং সুশাসনের ওপর নির্ভর করে সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। যুক্তরাষ্ট্র সহায়ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে, যাতে এ দেশের সব মানুষ উন্নতি করতে পারে।

ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বৈঠকে আমরা নাগরিক অধিকার, আগামী জাতীয় নির্বাচন, নাগরিকদের নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ মানবপাচার নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ছাড়া র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অনুরোধ করেছি।’

উজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফরে মার্কিন প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। তারা বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের সদস্য, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং মানবিক কার্যক্রমে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করছেন। প্রতিনিধিদলটি শুক্রবার ঢাকা ছাড়বে।