সর্বস্বান্ত হকার, ভোগান্তিতে পরীক্ষার্থী

13/12/2013 4:28 pmViews: 10

112001236441000মতিন আব্দুল্লাহ : তখন বেলা আড়াইটা। আরামবাগ ইনার সার্কুলার রোডে মাত্র পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন জরিনা বেগম। হঠাত্ জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের হামলা। তছনছ হয়ে যায় তার সবকিছু। চিতই-ভাপা পিঠা ও পিঠা তৈরির গুঁড়াগুলো পড়ে যায় রাস্তায়। বেলা সাড়ে তিনটায় তাকে ওই জায়গায় কাঁদতে দেখা যায়। এ নারী পিঠা বিক্রেতা বর্তমানকে বলেন— ভাই! কিভাবে বাঁচব। অবরোধ-হরতালের কারণে বিক্রি নেই। সপ্তাহজুড়ে টানা অবরোধের পর ভেবেছিলাম আজ কিছু বিক্রি হবে। কিন্তু আজ তো সবই হারাতে হলো।

জরিনা বেগম বলেন, পিঠা বিক্রি করে তাকে চারজনের সংসার চালাতে হয়। তিনি জানান, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বিক্রি নেই। ধারদেনা করে চালাচ্ছেন সংসার।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে শুক্রবার রাজধানীতে সহিংসতা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। জুমার নামাজের পর যখন হকাররা পসরা খুলে বসেছেন, তখনই অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। মতিঝিল-আরামবাগ-ফকিরেরপুল ও রামপুরা এলাকায় সহিংসতা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে হকার ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একই সঙ্গে চরম ভোগান্তিতে পড়ে বার্ষিক পরীক্ষার্থীরা। জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক অভিভাবক বলেন, এভাবে হরতাল-অবরোধ-সহিংসতা চললে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত্ ধ্বংস হবে। সরকার ও বিরোধী দলসহ দেশের বিশিষ্টজনদের কাছে তারা দ্রুত এ সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান।

জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার পর ইনার সার্কুলার রোড এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে রাখা ৫-৭টি মোটরবাইক পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। হকারদের দোকানের মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে রাস্তায়।

ফকিরেরপুলের চা বিক্রেতা রহমত তরফদার বর্তমানকে বলেন, জামায়াতের দ্বন্দ্ব সরকারের সঙ্গে। তারা সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করুক। আমরা দিনমজুররা তো কারো কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে আমাদের ওপর কেন এ আক্রোশ। আমাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে তারা। দোকান না করলে আমরা কি খাব; বউ-বাচ্চাদের কি খাওয়াব।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের টানা সপ্তাহব্যাপী অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির পর শুক্রবার ঘোষিত সহিংস কর্মসূচির বাইরে ছিল দেশ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, জনগণ এটা ভেবে বের হয়েছিলেন বাইরে। বের হয়েই শিকার হন জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের। মোটরবাইক, মাইক্রোবাস, বাস, অটোরিকশাসহ অনেক গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, হকাররা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দ্রুত চলমান সঙ্কট নিরসনের অনুরোধ জানান।

ছিন্নমূল হকার সমিতির সভাপতি কামাল সিদ্দিকী বর্তমানকে বলেন, রাজধানীর হকারদের এখন চরম দুর্দিন। গত কয়েক মাস ধরে বিক্রি নেই। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দোকান খুললেও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে হকারদের না খেয়ে মরা ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

Leave a Reply