সরকার লুটপাট আর নির্যাতনে ব্যস্ত : খালেদা জিয়া
সরকার লুটপাট আর নির্যাতনে ব্যস্ত : খালেদা জিয়া
২৯ জুন ২০১৫,সোমবার
জনগণের দিকে সরকারের কোনো নজর নেই অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। সাধারণ মানুষের দিকে তাদের কোনো নজর নেই। সরকার লুটপাট আর নির্যাতনে ব্যস্ত। দেশ এবং যুবসমাজকে রক্ষায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আজ সোমবার ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে ২০ দলীয়ে জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা আয়োজিত ইফতারে অংশ নিয়ে এ বক্তব্য দেন তিনি।
দেশের মুক্তির জন্য ইফতারে সবাইকে দোয়া করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি শুধু এইটুকুই বলব, ২০ দলীয় জোট আমরা মন্ত্রী-এমপি বড় কিছু হওয়ার জন্য নয়। আমরা এদেশটাকে রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কর আইনের শাসন, মানুষের মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে চাই।
খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা সবাই দেখছেন দেশের আজ কী অবস্থা? দেশ আজ গণতন্ত্রহীন। প্রত্যেক পদে পদে মানুষ বিপদের সম্মুখীন। আজকে ঘরে বাইরে কোথায়ও কেউ নিরাপদ নয়। মানুষের মনে কোনো শান্তি নেই। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা। আজকে অবৈধ সরকার তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শুধু বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। আর সাধারণ মানুষের দিকে তাদের কোনো নজর নেই। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে। আজকে মধ্যবিত্ত মানুষেরা রোজা রাখছে। অথচ দুইবেলা ভালোমন্দ পর্যন্ত খেতে পারছেনা। এই হলো দেশের অবস্থা। কিন্তু তাদের (সরকারের) কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।
বেগম জিয়া বলেন, সরকার আছে লুটপাট নিয়ে, কী করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করবে আর কী করে আমাদের লোকদের ওপর ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম অত্যাচার নির্যাতন করবে এই নিয়ে।
মির্জা ফখরুলের জামিনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দলের মহাসচিবকে আদালত জামিন দিয়েছিল। কিন্তু তাকে ফের হয়রানি করতে মামলা দিয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের নেতারা এতো খুন করে, গুম করে তাদের কোনো এত কিছু করেও তাদের সবাই মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে ধরাই হয় না।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান আয়োজিত ইফতার পার্টিতে এলডিপির অলি আহমেদ, জাতীয় পার্টির কাজী জাফর আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর আমিনুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, জাতীয় দলের এহসানুল হুদা, জাগপার সহসভাপতি রেহানা প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমানকে নিয়ে এক টেবিলে বসে ইফতার করেন জোট নেত্রী খালেদা জিয়া।
দেশ ধ্বংসের চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া আরো বলেন, আজকে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য এই আওয়ামী লীগের লোকজনকেই নামানো হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট করা, দখল করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃক্সক্ষলা সৃষ্টি করে বন্ধ করে দেয়া আর ড্রাগের আমদানি করছে তারা। ব্যাপক মাদক আমদানি করে বাংলাদেশের যুবসমাজটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তারা নিজেরা নষ্ট হয়ে গেছে এখন সমাজটাকে নষ্ট করতে চাচ্ছে।
রমজান মাসেও মহিলারা নিরাপদ নয় উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে আমাদের মহিলারা নিরাপদ নয়। কি ঘরে, কি বাইরে, কি ইউনিভার্সিটিতে কি কর্মক্ষেত্রে। কোথাও নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, আগে আমরা কখনো পত্রিকায় দেখিনি যে, বাসে, ট্রেনে বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের ওপর নির্যাতন হতো। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী এমন করে টাকা পয়সা বানিয়েছে তারা কী করে টাকা খরচ করবে তারা বুঝতে পারছেনা। সেই জন্য এখন নারীদের ওপরে গণধর্ষণ পর্যন্ত হচ্ছে। যা শুনলে কষ্ট হয় এবং বুঝা যায় বাংলাদেশ আজকে কোন পর্যায়ে গেছে ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এসব ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ। ২০ দলীয় জোট আমরা তো আছি। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা মন্ত্রী এমপি বড় কিছু হওয়ার জন্য নয়। আমরা এই দেশটাকে রক্ষা করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করে এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে আমরা আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং সকল মানুষের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আসুন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। কাজ করছি।
ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই জালেমরা একদিন বিদায় নেবে। আজ যারা বড় বড় কথা বলছে, বাজে নোংরা কথা বলছে, তাদের কি পরিণতি হবে, সেটা তারা বুঝতেও পারছে না। যখন বুঝবে যে হ্যা আমরা অন্যায় করেছিলাম, ভুল করেছিলাম, তখন তারা দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা পাবে না, আল্লাহর কাছেও ক্ষমা পাবে না। কোখাও তাদের জায়গা হবে না।
এ ছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, ২০ দলীয় জোটের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, আহসান হাবিব লিংকন, এএসএম শামীম, খালেকুজ্জামান চৌধুরী, আসাদুর রহমান খান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়–য়া, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, কবি আল মুজাহিদী ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।
ইফতারে বিএনপির এম কে আনোয়ার, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আবদুল হালিম, হায়দার আলী, ফজলুল হক মিলন, নিতাই রায় চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব নূরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, হেলেন জেরিন খান, শামা ওবায়েদ, নিখোজ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল, শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইমান ওয়াফি, জাগপার মহিউদ্দিন বাবলু, আবু মোজাফফর মো. আনাস, আসাদুর রহমান খান, শেখ জামালউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ইফতারে অংশ নেন।