সরকার ভিন্ন কৌশলে বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে : রিজভী
সরকার ভিন্ন কৌশলে বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে : রিজভী

সরকার গণগ্রেফতার চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন কৌশলে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। কারন ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতার মগডালে বসে থাকার মজাটা পাচ্ছে, তাই তারা নাছোড়বান্দার মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে আগ্রহী। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন।
তিনি বলেন, আগামীকাল শনিবার রাজধানীর খিলক্ষেতে হোটেল লা মেরিডিয়ান-এ সকাল ১০টা থেকে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে নির্বাহী কমিটির সভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্যদের মাঝে গতকাল থেকে পরিচয় পত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। আজকেও সারাদিন নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের মাঝে পরিচয় পত্র বিতরণ করা হবে। সভাস্থলে নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে সকাল ৮-৩০টা থেকে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, তবে আমরা এমন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দু:সময়ের মধ্যে বাস করছি যে, যখন স্বাভাবিক রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মকান্ড করতে যেয়েও বিএনপি নেতৃবৃন্দরা সরকারী নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছেন। বিপদ, শঙ্কা, আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে তাদেরকে যাপন করতে হচ্ছে দিনরাত্রি। নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিচয় পত্র সংগ্রহ করতে এসে অনেকেই গ্রেফতার হচ্ছেন। বাসা থেকেও নেতৃবৃন্দরা গ্রেফতার হচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করা যেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পুতুল-খেলা। যখন ইচ্ছা হচ্ছে বাসা থেকে, রাস্তা থেকে, হাটবাজার থেকে, দলীয় কার্যালয় থেকে তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে অস্বীকার করার পর দরকষাকষি শুরু হয়, বলা হয় বেশী টাকা দিলে হালকা মামলা দেয়া হবে, আর কম টাকা দিলে কঠিন মামলা দেয়া হবে, আর যদি অর্থ দিতে অক্ষম হয় তাহলে শুরু হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এটিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র ও শাসনের নমূনা। গুন্ডামীর এই নবসংস্করণ ভোটারবিহীন সরকারের দু:শাসন টিকিয়ে রাখার ইঙ্গিতবহ। গণতন্ত্রের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার সহিংস আগ্রাসী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, গতকাল দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিপ্লবের হার্টে অনেকগুলো রিং বসানো আছে। কিছুক্ষণ আগে আমরা সংবাদ পেলাম হৃদযন্ত্রে প্রচন্ড বেদনা অনুভব করলে তাকে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতাকর্মীদের শারীরিক অসুস্থতা এসব কিছুই বিবেচনায় না নিয়ে আদিম প্রতিশোধপরায়ণতার মনোবৃত্তি নিয়ে নির্লজ্জ বেপরোয়াভাবে কাজ করছে।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জাল নথির ওপর ভিত্তি করে ভুয়া ও মিথ্যা মামলায় হয়রানীর মাধ্যমে জুলুম করা হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চলছে অত্যুগ্র মাত্রায় জেল, জুলুম, নির্যাতন, গ্রেফতার ও গণগ্রেফতার। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের কাছে প্রমান হয়ে গেছে সরকার পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন কৌশলে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। কারন ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতার মগডালে বসে থাকার মজাটা পাচ্ছে, তাই তারা নাছোড়বান্দার মতো ক্ষমতা ধরে রাখতে আগ্রহী। সেজন্যই একতরফা ভোটের ফলাফল ঘোষনা প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় বলেই নির্বাচনী ঘর অগোছালো রেখেই আবারো ৫ জানুয়ারীর মতো নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। জাতির সামনে সরকারের উদ্দেশ্য পরিস্কার। বিএনপিসহ বিরোধী দল নিধনে যে দমন নিপীড়ণ চলছে এ নিয়ে দেশ-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠেছে। অন্তহীণ ক্ষমতালিপ্সার কারনেই জনগণের বদলে বন্দুকের ওপরেই আস্থা বেশী সরকারের। সেজন্য জনগণের ব্যাপক অংশের প্রতিনিধি বিএনপি-কে নিপীড়ণ-নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত করে হয়রানীর জালে আটকে রেখে নিজেদের পছন্দের নির্বাচন করতে চায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। তবে নিপীড়ণ করে কোনো স্বৈরশাসকের শেষ রক্ষা হয়নি, এ সরকারেরও হবে না। দেশ বাঁচাতে, গণতন্ত্র বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সরকারের সকল অশুভ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর বিচারের নামে অবিচারের যে কালো ছায়া বিস্তার লাভ করানো হয়েছে তাতে দেশবাসী ক্ষুদ্ধ। প্রহসনের বিচার নিয়ে মানুষের ক্ষোভ ভষ্মাচ্ছাদিত বহ্নির মতো ধিকিধিকি জ্বলছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলার বিচার নিয়ে কোন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে জনরোষ চরম প্রতিবাদের শক্তিতে রাজপথে আছড়িয়ে পড়বে।
গতকাল বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু সহ বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং অনেকের বাসায় লাগাতার তল্লাশীর ঘটনায় আমি দলের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে সরকারকে এধরণেরর হিংস্র্রতা থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।
রিজভী জানান, গতকাল থেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। গত চার দিনেই গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ২৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।