সরকার বিএনপি’র আন্দোলনে ভয় পেয়েছে

13/01/2023 9:26 pmViews: 3

mzamin

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তারা ভয় পেয়ে বিএনপি’র ওপর আক্রমণ করছে। ইতিমধ্যে সরকার প্রমাণ করেছে যে, তারা ভয় পেয়েছে। কিছুদিন পূর্বেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলতেন- বিএনপি নাকি রাস্তায় দাঁড়াতে পারে না। আমাদের নাকি কোমর নেই। এখন আমাদের আন্দোলন দেখে তারা অস্থির। আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য সব রকম শক্তি নিয়োগ করে জনগণের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করছে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত বুধবার দেশের সব বিভাগীয় সদরে দলটির ডাকা গণঅবস্থান কর্মসূচিতে হামলার বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী একনায়কতান্ত্রিক সরকার যখন থাকে, জনগণের সঙ্গে যখন তাদের সম্পর্ক থাকে না, জনবিচ্ছিন্ন হয়, যখন জনগণ প্রতিবাদ করতে শুরু করে, তখন এ ধরনের সরকার আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়। নির্যাতন শুরু করে। ইতিহাস প্রমাণ করে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্যাতন-নিপীড়ন করে এই আন্দোলনকে দমন করা যায় না।

‘আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া সহজ নয়’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনেক কথারই জবাব দিই না। কারণ, উনি কখন কী বলেন, জনগণ ঠিক বুঝতে পারে না।‌ এগুলোর জবাব দেয়ার প্রয়োজন নাই। কাজেই সেটার প্রমাণ হবে।

বিএনপি’র সমমনা দলের জোট নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এটা ঘোড়ার ডিম ছাড়া কিছুই নয়। যুগপৎ আন্দোলন ব্যর্থ হচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথার উত্তর দেই না। আমার মতোই সারা দেশের মানুষ ওনার কথার কোনো গুরুত্ব দেয় না। সেটার প্রমাণ পান আপনারা উনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলার সঙ্গে সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এটাই সিমবলিক ঘটনা, প্রতীকী ঘটনা ঘটেছে।

১১ই জানুয়ারি বিভাগীয় শহরে বিএনপি’র গণঅবস্থানে হামলার অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও রাজবন্দিদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ই জানুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে গণঅবস্থান কর্মসূচি ছিল। গণঅবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ফরিদপুর, ময়মনসিংহে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই হামলা করে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত বুধবার বেলা ১১টায় ফরিদপুর শহরের অম্বিকা ময়দানে গণঅবস্থান শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অম্বিকা ময়দান সংলগ্ন শহীদ সুফী ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে। উত্তেজনাকর স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা রাজবাড়ী, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতাকর্মীদের মিছিলে হামলা করে। অম্বিকা ময়দানে তারা হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ করে তাণ্ডব সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পুলিশ উল্টো বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে এ সময় হামলাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করে বিএনপি’র ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। আহত হয় শতাধিক নেতাকর্মী।

তিনি বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ময়মনসিংহ নগরীর হরি কিশোর রায় রোডে গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে আসার সময় ময়মনসিংহ মহানগরের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলকারী নেতাকর্মীদের ওপরে সশস্ত্র হামলা চালায়। অবস্থান কর্মসূচির সন্নিকটে গোলপুকুরপাড় এলাকায় গফরগাঁও উপজেলার নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ ও রড দিয়ে হামলা করে। এ সময় গফরগাঁও উপজেলা বিএনপি’র ৩ কর্মীর মাথা ফেটে যায় এবং ১২ জন আহত হয়। নগরীর জুবলীঘাট এলাকায় কিশোরগঞ্জ থেকে আগত নেতাকর্মীদের বাস এবং জিরো পয়েন্ট এলাকায় হালুয়াঘাট থেকে আগত বাসে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এ সময় ২ নেতাকর্মীর মাথায় সন্ত্রাসীরা রড ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তাদের মাথাও ফেটে যায় এবং তারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সারাদিন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

গণঅবস্থান কর্মসূচিতে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ১০ই জানুয়ারি ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রোকনুজ্জামান সরকার রোকনকে গোয়েন্দা পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারফ হোসেনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। গণঅবস্থানকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকা জেলার ধামরাই, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। ধামরাই থেকে গণঅবস্থানে আগত নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবাহন পুলিশ পথিমধ্যে আটকে গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ ২৬ নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। সাভার থেকে ১০ জন এবং দোহারে ২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা গণঅবস্থানে যোগ দিতে আসার সময় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে হামলা করে এতে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়। সন্ত্রাসীরা মহিলা নেত্রীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপরেও হামলা করে। ১০ই জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোক্তার হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঢাকার গণঅবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার সময় মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি’র ৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতানুগতিকভাবে সরকার প্রশাসনকে দিয়ে বাধা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, এডভোকেট আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান খোকন প্রমুখ।

Leave a Reply