সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে: যুব সমাবেশে মির্জা ফখরুল

17/10/2023 1:49 pmViews: 3

mzamin

facebook sharing buttonwhatsapp sharing button

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল একটা বিবৃতি দিয়েছেন, এই বিবৃতিতে প্রধান কথা হচ্ছে সংলাপের কথা। সেটার জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- আমরা তখনই আলোচনায় বসতে রাজি যখন বিএনপি সমস্ত শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনায় আসবে। আমার যে প্রশ্ন, আপনারা কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ? এটা আপনাদের প্রমাণ করতে হবে। আর সবার আগে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের উদ্যোগে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং অবৈধ সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে’ যুব সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। এর আগেই বেলা ১১টার পর থেকেই সমাবেশস্থলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। মির্জা ফখরুল বলেন, এই দলটি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো প্রতিনিধিদল নয়। এই দলটি হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বাধীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রধান দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির থিংক ট্যাঙ্ক তারা পাঠিয়েছে যে, বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে কি? এটা দেখা এবং নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বড় কোনো টিম পাঠাবে কিনা। এই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

তারা ৫ দিন বাংলাদেশের নির্বাচনের সঙ্গে যারা জড়িত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, সম্পাদক, নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং আমাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা একটা বিবৃতি দিয়েছেন, এই বিবৃতিতে তারা ৫টি সুপারিশ করেছেন। এরমধ্যে প্রধান কথা হচ্ছে সংলাপের কথা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আজকে যে বলছেন সংবিধানের ভিত্তিতে হতেই হবে, তাহলে সবার আগে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ আপনি অবৈধভাবে আছেন। সেই কারণে ভূতের মুখে রামনাম শোভা পায় না। জনগণকে প্রতারণা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। আমাদের কথা পরিষ্কার, আগে পদত্যাগ করেন, সংসদকে বিলুপ্ত করেন, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন এবং একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে নির্বাচনে আসেন।

তিনি আরও বলেন, যুবদল আজকে ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আজকে আন্দোলনের চূড়ান্ত ও শেষ পর্যায়ে এসে দেশের মানুষের আশা ও সাহসকে দ্বিগুণ বাড়িয়েছে। আজকের এই সমাবেশ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের যে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে সেখানে অনেক বেশি শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, সমস্ত বিচারবিভাগ, প্রশাসনসহ সবকিছু তারা দলীয়করণ করছে। পুলিশকে বলতে চাই, আমরা জানি আপনারা সবাই বেআইনিভাবে কাজ করতে চান না। আমরা জানি আপনারা আইনের শাসন মেনে কাজ করতে চান। এই আওয়ামী লীগ আপনাদের বাধ্য করে বেআইনিভাবে এবং সংবিধানকে সম্পূর্ণ দূরে রেখে, আইনের শাসনকে দূরে রেখে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন করার জন্য।

যুবদলের ইতিহাস তুলে ধরে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আগের চেয়ে যুবদল অনেক সংগঠিত তাহলে এই সরকারকে এখন পর্যন্ত কেন নাড়া দিতে পারছি না। এই সমাবেশ সরকারের প্রতি স্পষ্ট বার্তা যে, তোমাদের আর সময় নাই। সবাই এই সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে নেমেছে। আর আন্দোলন কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে। আপনারা যার যার বাড়িতে চলে যাবেন। আর মাথায় রাখবেন বেগম জিয়া কারাগারে আটক আছেন। তিনি চিকিৎসা পান না। বহু অনুনয়-বিনয় করেছি। কিন্তু উনাদের কানে সেটা প্রবেশ করে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সভা সফল হয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মতৃপ্তির কারণ নাই। বিএনপি নির্মূল করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার প্রচেষ্টা করছে। পুলিশ এবং আদালত একযোগে নামছে বিএনপিকে দমন করতে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার মরণ কামড় দিবে। তারা গেরিলা কায়দায় গ্রেপ্তার করে এবং বিনা কারণে মামলা দেয় তাহলে আমরাও বিনা কারণে ছাড় দিতে রাজি না। সরজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই নয়াপল্টনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন হাজার হাজার নেতাকর্মীরা। যুবদলের ঢাকার বিভিন্ন ইউনিট থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। তারা মাথায় বিভিন্ন রঙের টুপি পরে সমাবেশে আসেন। এ সময় তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম আজাদ, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply