প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মাসেতু নিয়ে বড় চক্রান্তে পড়তে হয়েছিল। এক্ষেত্রে সরকারকে দুর্নীতি-বাজ বানানোর ষড়যন্ত্র করেছিল বিশ্বব্যাংক। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম যে দুর্নীতি কোথায় হয়েছে প্রমাণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক প্রমাণ করতে পারেনি। সেই চ্যালেঞ্জে আমরা জয়ী হয়েছি। বাঙালির সম্মান ও মর্যাদা বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ আইডিইবি’র ২১তম জাতীয় কনভেনশন ও ৩৯তম কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, প্রকল্প গ্রহণের সময় এর প্রয়োজনীয়তা ও অহেতুক ব্যয়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সরকারি পয়সার অহেতুক অপচয় করা যাবে না। চলমান প্রকল্পগুলো যাতে কেউ ষড়যন্ত্র করে বন্ধ করতে না পারে সেজন্য দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি।
দেশের বৃহত্ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সারাদেশে মেয়েদের জন্য ৪টিসহ আরো ২৫টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটি কারিগরি স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সরকার সকল বিদ্যালয় এবং কলেজে ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং কোর্স’ অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন করতে চাই। এর পাই পাই পয়সা যেন মানুষের কাজে লাগে। অকাজে অহেতুক অর্থের ব্যবহার যেন না হয়। তিনি বলেন, যে কাজগুলো আমরা করছি, তা যেন খুব দ্রুতই সম্পন্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সেই কাজগুলো পুনরায় সম্পন্ন করতে হয়। তাই সরকার প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জে তার গ্রামের বাড়ির একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র প্রকৌশলীদের সামনে তুলে ধরেন। ২০১৪ সালের মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় আড়াই বছর সময় অতিক্রান্ত হওয়ার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের হাতে সময় আছে দুই বছর। কারণ ৬ মাস নির্বাচণের প্রস্তুতিতেই চলে যায়। তাই এই সময়ে আমরা গৃহীত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে আন্তরিক হবার জন্য প্রকৌশলীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে আরো বলেন, এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন কোনো খেলা খেলতে না পারে সেটা আপনারা দেখবেন। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, দাবি জানানোর আগেই সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে। পদ মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। সবদিকে আমরা সুযোগ করে দিয়েছি যাতে আমাদের প্রকল্পগুলো সুন্দরভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, বেতন-বৈষম্য দূরীকরণের জন্য পলিটেকনিক শিক্ষকদের স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও এর উন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরেন। প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের ৮০-৮৫ ভাগ সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম মূলত আপনারাই করে থাকেন। আমরা প্রকল্প পাস করি। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এটার বাস্তবায়ন করেন আপনারা। আপনাদের দক্ষতা, আন্তরিকতা ও সততার ওপর নির্ভর করে প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন এত সহজ ছিল না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রকৌশলীদের উদ্দেশে বলেন, এই উন্নয়নের অংশীদার আপনারাও। তিনি বলেন, দ্রুত প্রকল্প করেছি, আপনারা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুঁড়ে ঘর বাংলাদেশে থাকবে না এই ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখন আর কুঁড়ে ঘর দেখা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশের প্রতিটি মানুষ অন্তত দুবেলা পেট ভরে খেতে পাবে। রোগে চিকিত্সা পাবে, শিক্ষা পাবে মাথা গোঁজার ঠাই পাবে। তার সরকার সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, সারাদেশে রাস্তা-ঘাট, পুল, কালভার্ট, ব্রিজ আমরা করে দিচ্ছি। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানটা বিবেচনায় যতটুকু আমাদের প্রয়োজন ততটুকুই আমরা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ, আকাশপথ উন্নয়নে তার সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, এখন সরকার ৬টি নতুন আধুনিক বিমান যুক্ত করেছে। আরো প্লেন আসছে। সবদিক থেকেই আমরা একটা উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য, জেল হত্যার শিকার জাতীয় চার নেতা এবং প্রয়াত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপরেই প্রধানমন্ত্রী আইডিইবি’র অ্যালবামে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইডিইবি’র ২১তম জাতীয় কনভেনশন ও ৩৯তম কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আইডিইবি মেডেল-২০১৬’র জন্য মনোনীত প্রকৌশলীরা হলেন- প্রকৌশলী ওয়াহিদুননবী (মরণোত্তর), প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল গোফরান এবং প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ’র (আইডিইবি) প্রতিষ্ঠাতা একেএমএ হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান।