সময় না দিয়েই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন
ঢাকা, ১৯ মার্চ : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়া ও অন্য পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। দুই মামলাতেই ২১ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
বুধবার বিকালে ঢাকার ৩নং বিশেষ জজ বাসুদেব এ রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে এ দুটি মামলার বিচার কাজ শুরু হলো। এর আগে এ দুই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে দেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অপর আসামিরা হলেন- কাজী সালিমুল হক, শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় অপর আসামিরা হলেন- জিয়াউল ইসলাম মুন্না, মনিরুল ইসলাম খান ও খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী।
বুধবার মামলা দুটির অভিযোগ গঠনবিষয়ক শুনানির দিন ধার্য ছিল। দুপুর ১টার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হন। এর আগেই আসামিপক্ষ থেকে শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করার জন্য আবেদন করা হয়। বিচারক এ আবেদনের শুনানি নিয়ে তা খারিজ করে দিলে আদালত কক্ষে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিচারক আজকেই অভিযোগ গঠনবিষয়ক আদেশ দেয়া হবে বলে এজলাস ত্যাগ করেন।
বিচারকাজ চলাকালে খালেদা জিয়াকে বসার জন্য একটি চেয়ার দেয়া হয়।
দুপর দুইটার দিকে বিএনপিপন্থী চারজন আইনজীবী মামলা থেকে খালেদা জিয়ার অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদন নিয়ে বিচারকের খাস কামড়ায় যান। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে এসে সোয়া দুইটার দিকে আবারও বিচারকের কাছ যান তারা। এ সময় তারা সকালে সময় চেয়ে করা আবেদনটি খারিজ করে আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তা পুনর্বিবেচনার জন্য আবার সময় চেয়ে আবেদন জানান।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সেখান থেকে বের হয়ে আদালতের এজলাস কক্ষে গিয়ে খালেদা জিয়াকে জানান, এ আদালতের প্রতি তাদের আস্থা নেই।
দুপুর ১টায় বেগম খালেদা জিয়া আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হলে শ’ শ’ আইনজীবী তার সমর্থনে স্লোগান দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গুলশানের বাসা থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সাবেক পিপি আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা বারের সভাপতি মহসীন মিয়াসহ শতাধিক আইনজীবী এ সময় আদালতে ছিলেন।
অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের এ ধরনের প্রক্রিয়ায় অভিযোগ গঠন নজিরবিহীন। একজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে হলে তার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ উভয়কে শুনানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। অভিযোগের আদেশ ভেতর থেকে লিখে নিয়ে আসা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়ার এ মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
এদিকে খালেদা জিয়ার মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে নেয়া হয়েছিলো বিশেষ নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হয়েছিলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলা করে দুদক। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ এ মামলা করেন। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।