রাজধানীতে মন্ত্রী এমপি রাজনীতিকদের বাড়িতে হামলা, পুলিশকে ফোনে হুমকি

25/10/2013 10:31 amViews: 21

Lalmohan pic-6-10-13প্রতিবেদক : বিজিবির টহল ও কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেও শুক্রবার রাজধানীতে মন্ত্রী এমপিদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। এদিন মোবাইল ফোনে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলে পুলিশকে হুমকি দেয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গাড়িতে হামলাসহ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।

সকাল ছয়টায় জিগাতলায় দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইলিয়াসুর রহমান বাবুলের বাসভবন লক্ষ্য করে ককটেল বোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। মোটরসাইকেল থেকে বোমাগুলো ছুড়ে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। মন্ত্রীর বাসায় বোমা ছুড়ে মারার সংবাদ পেয়ে ধানমণ্ডি থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বোমা হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জিগাতলা ও ধানমণ্ডি এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে ও বোমাবাজদের শাস্তি দাবি করে স্লোগান দেন।

একইদিন সকাল ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল মান্নান ও দলের মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন অসীমের ধানমণ্ডির বাড়ি লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল ছোড়া হয়। নাসিরউদ্দিন অসীমের বাসায় ছোড়া ককটেলের একটি তার বাড়ির দেয়ালে এবং অন্যটি বাসার সামনে বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মান্নানের বাড়ি লক্ষ্য করে দুই দফায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে। বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী শাহজাহান বলেন, সকালের বোমা হামলার পর বেলা তিনটার দিকে চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে সাত-আট দুর্বৃত্ত আবার তার ধানমণ্ডি এক নম্বর সড়কের ২৩/এ, বাড়ির গেটে দুটি ককটেল ফাটিয়ে চলে যায়।

ধানমণ্ডি থানার ওসি মাসুদ করিম বলেন, কারা বোমাগুলো ছুড়ে মেরেছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ দুটি বাড়ি থেকে বোমার বেশকিছু আলামত জব্দ করেছে। এ ঘটনার পর ওই দুটি বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসে।

এদিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা ঢাকা মহানগর পুলিশের সব ডিসি, ওসি ও অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার টেলিফোনে মেসেজ পাঠায়। মেসেজের বক্তব্য ছিল— ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় নেই। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নেব আমরা।’ ওসিরা তাত্ক্ষণিক মেসেজের বিষয়বস্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করার জন্যই মেসেজ পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক শাহিদা তারিক দীপ্তির পল্লবীর ৩৪ নম্বর বাসা লক্ষ্য করে পর পর তিনটি ককটেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। একটি অবিস্ফোরিত থাকে। এ ঘটনায় এমপির পিয়ন ইমান আলী আহত হন। এ ঘটনার পর পুলিশ দীপ্তির বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন এলাকায় সহিংসতার সময় ছাত্রলীগকর্মীদের হাতে প্রহূত হন শিবিরের দুই কর্মী। তারা হলেন আবদুল মালেক (১৮) ও রিফাউল ইসলাম (১৭)। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে চিকিত্সার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। প্রাথমিক চিকিত্সা শেষে দুই শিবিরকর্মীকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।

এছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। বেলা তিনটায় মত্স্য ভবনের সামনে শিবিরকর্মীরা পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। একই সময়ে সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সামনে পার্কিং করা একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মিরপুর শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন ওভারব্রিজের গলিতে ছাত্রশিবির সাত-আটটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। দ্রুত পুলিশ হাজির হলে হামলাকারীরা আশপাশের গলিতে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় কারওয়ানবাজারে আরেকটি যাত্রীবাহী বাস ও হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে একাধিক বোমা ছোড়া হয়। শুক্রবার রাজধানীর পরিস্থিতি ছিল অনেকটা হরতালের মতো। আতঙ্কের কারণে লোকজন বাসার বাইরে বের হননি। রাস্তাঘাটে যানবাহনও তেমন একটা চলেনি। সব দোকানপাট ছিল বন্ধ। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল ছিল হরতালের দিনের চেয়েও কম। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ কেন্দ্র করে এদিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখী সব প্রবেশপথে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ র্যাব ও বিজিবি। রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা চৌকি। এছাড়াও সংসদ ভবন, সচিবালয়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, গণভবন, বঙ্গভবন, উচ্চ আদালতসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নিচ্ছিদ্র। গতকাল রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোনো বাসও ছাড়েনি। তবে বিমান, লঞ্চ ও ট্রেনের যাতায়াত ছিল স্বাভাবিক।

Leave a Reply