সবাই শেখ হাসিনার পতনের অপেক্ষায় আছে: বরিশালে তারুণ্যের সমাবেশে মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার অবৈধ। আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের স্বার্থে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তরুণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে সরাতে হবে।
শনিবার বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু পার্কে বিএনপি’র ৩ অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। শুধু ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে দেশে সংকটকে দীর্ঘ করেছে সরকার।
তিনি বলেন, আজকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বিদায়ের জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে। বরিশালের তারুণ্যের সমাবেশ তাই প্রমাণ করে।
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। যুবলীগের পাল্টা সমাবেশ ঘিরে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই বিএনপি’র এই তিন সংগঠনের সমাবেশ শেষ হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গত ১৪ বছরে ৭০০’র বেশি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের সন্তানেরা এখনো অপেক্ষা করে তাদের বাবা-ভাই ফিরে আসবে। কিন্তু এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের সন্তানদের পিতৃহারা, স্ত্রীদের স্বামী হারা এবং মায়েদের সন্তানহারা করেছে। শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে গত ১৪ বছর ধরে নির্যাতন করছে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না দাবি করে ফখরুল বলেন, এরা (আওয়ামী লীগ) সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের কথা বলে! কিন্তু কোন সংবিধান? সংবিধানে তো বলা হয়েছে দেশের মালিক জনগণ। জনগণতো ভোট দিতে পারছে না। দুই প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। অথচ ভোট দেয়া হয় প্রতিনিধি নির্বাচিত করার জন্য। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে বলে যে ভোট হয়ে গেছে। কারণ তারা জানে, জনমতের প্রতিফলন হলে তারা ১০ টি আসনও পাবেন না। এত অন্যায় করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পর শোনা গেল সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিরা অনেক টাকা সরিয়ে ফেলেছে। লোকে এসব বলাবলি করে। আওয়ামী লীগের এই চরিত্র দেশের মানুষ বোঝে ও জানে। তিনি বলেন, আজকে সরকার বিদ্যুতের কথা বলে। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে প্রকল্প করে টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করা। আজকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার আরাম-আয়েশ করছে। এরা কাগজ, কলম, সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। এরা যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে এই অবস্থা চলতে থাকবে। সুতরাং এই অবৈধ সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় করতে হবে। বরিশালের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব আবারো স্পষ্ট করে বলেন, এই সরকার বৈধ নয়। এরা অবৈধ। তাদের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের স্পষ্ট কথা- আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবো না। এই সরকারের অন্যায় দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে কিন্তু র্যাব’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরা আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে গুম করে রাখে। গত ৫ বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রেখেছে ।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ না করার কারণে অনেক মেধাবীর চাকরি হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললে গুম খুন করা হচ্ছে। জামালপুরে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের সত্য ঘটনা প্রকাশ করেছেন। ৩০ জন সাংবাদিককে এ পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতেই করে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবো না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না। এ সময় বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, আমাদের তরুণ সমাবেশ ঘিরে সারা দেশে তরুণ প্রজন্মের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো বাধা-বিপত্তি তরুণদেরকে দমাতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ্ তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটাবে। পূব-নির্ধারিত সমাবেশে সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বরিশালে আসেন পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা জেলার নেতাকর্মীরা। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে দুপুরের মধ্যেই মাঠে জড়ো হন। বিকাল ৩টার দিকে সাংস্কৃতিক আয়োজন শুরু হয়। বিকাল ৪ টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশ স্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার-পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়।