সন্দেহভাজন দুই আইএস সদস্য গ্রেফতার
সন্দেহভাজন দুই আইএস সদস্য গ্রেফতার
‘ইরাক-সিরিয়ায় পাঠাতে ২০ জনের তালিকা করেছিল’
নাজমুল সাঈদ, দ্য রিপোর্ট : ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক সুন্নীপন্থী সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কথিত জিহাদে অংশ নেওয়ার জন্য ২০ সদস্যের একটি তালিকা আটক যুবকরা প্রস্তুত করেছিল বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মো. মনিরুল ইসলাম।
মিন্টু রোডের ডিএমপির জনসংযোগ সেন্টারে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আইএস সদস্য সন্দেহে সাকিব বিন কামাল ও আমিনুল ইসলাম বেগকে গ্রেফতারের পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গ্রেফতারদের ব্যাপারে মনিরুল ইসলাম বলেন, ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক আইএস এর কথিত জিহাদে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যেই আমিনুল ইসলাম লোকজনকে সংগঠিত করছিল। সে মূলত অনলাইনে যোগাযোগ করতো। এছাড়া তারা নিজেরাও একটি ব্লগ চালায়।
তিনি আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল ইসলাম বেগ জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমেই আইএসের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতেন। ইতোমধ্যে তিনি ২০ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন। যারা ইরাক ও সিরিয়ার কথিত জিহাদে অংশ নিতে ইচ্ছুক। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল আরও জানান, আমিনুল ইসলাম মূলত গুরু। তিনি লোকবল সংগ্রহের কাজ করতেন। ইচ্ছুকদের জিহাদে পাঠিয়ে তিনি নিজেও সেখানে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
মনিরুল জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কথিত জিহাদে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে অনেকে যাওয়ার চেষ্টার করছে। কিছু কিছু সময় এদেরকে আটকও করা হয়েছে। আমিনুল ইসলাম বেগ জেএমবির সমন্বয়ক হলেও অনলাইনেই মূলত আইএসের উপর পড়াশোনা করেছেন এবং আইএস যে কথিত খিলাফত কায়েম করেছে সেটিকে সঠিক পথ বলে মনে করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতারেরা জানিয়েছেন, কোরআন শরিফে যে ধরনের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেই অনুসারে ইসলামের প্রকৃত খলিফা আবু বক্কর আল বাগদাদী। এ কারণেই তারা আবু বক্করের বায়াত গ্রহণ করেন এবং তাকে সহযোগিতা করে সারাবিশ্বে আইএসের আদর্শ ছড়িয়ে দেওযার উদ্দেশ্যে জিহাদে অংশ নিতে আগ্রহী।
আমিনুল ইসলাম মালয়েশিয়া থেকে আইটির (তথ্যপ্রযুক্তি) উপরে পড়াশোনা করে বাংলাদেশের একটি বহুজাতিক কোম্পানির আইটির হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাকিব বিন কামাল প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, সাকিব বিন কামাল মূলত আমিনুল ইসলামের সহযোগী এবং ২০ জনের তালিকার মধ্যে একজন। তিনি সিরিয়ার কথিত জিহাদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সাকিব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।
তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিককালে যে ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে এদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া কোনো ইসলামিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে কিনা তাও দেখা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইএস মনে করে, যারা তাদের মতামতের সরাসরি বিরোধিতা করে এবং যাদের কারণে তাদের মতামত প্রচার-প্রসার কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
২০ জনের তালিকা প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এরা সবাই সচ্ছল পরিবারের সন্তান এবং অনেকে চাকরি-বাকরি করার চেষ্টা করছে। এছাড়া অনেকেই পরিবারের অর্থ নিয়ে চলেন। ইরাক বা সিরিযাতে যাওযার মতো অর্থ তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে।
মনিরুল ইসলাম জানান, গত রবিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম মডেল থানার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোড থেকে আমিনুল ইসলাম বেগ ও মোহাম্মদপুর এলাকার লালমাটিয়া থেকে তার সহযোগী সাকিব বিন কামালকে আটক করা হয়।
এদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম বেগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামাতুল মোজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর আঞ্চলিক সমন্বয়ক। তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, ১টি ল্যাপটপ চার্জার, ৩টি মোবাইল সেট, বিভিন্ন লেখকের ৭টি ইসলামি জিহাদী বই ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম মডেল থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।