সন্ত্রাসীকে প্যারোল না দিয়ে কারাগারেই বাবার জানাজা

10/01/2014 6:47 pmViews: 8

চট্টগ্রাম : সন্ত্রাসের অভিযোগে আটক ব্যক্তিকে প্যারোলে মুক্তি না দিয়ে উল্টো তার বাবার মৃতদেহ জেলে নিয়ে জানাজার ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রাম কারগার কর্তৃপক্ষ। মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিজনের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের অনুমতির পরও জেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্যারোলে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর কারা অভ্যন্তরে জানাজার ব্যবস্থা করেছে।

শুধু নিক্সনের বাবার লাশ নয়, সঙ্গে বাইরে থেকে জানাজায় শরীক হওয়ার জন্য ১০/১৫ জন ব্যক্তিকে কারাগারে প্রবেশের অনুমতিও দেয়া হয় এবং তারা জানাজায় যথারীতি শরীক হন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষের কারো ভাষ্য পাওয়া না গেলেও আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, জেল কোড়ে কারা অভ্যন্তরে কারো জানাজা পড়ার বিধান নেই। এটা অভিনব ঘটনা। রাষ্ট্রের পক্ষে জেলা প্রশাসক কাউকে প্যারোলে মুক্তির আদেশ দিলে তা প্রতিপালন না করা বাড়াবাড়ি। তাছাড়া এ ধরনের ঘটনায় জেলের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। সন্ত্রাসের অভিযোগে আটক শিবির ক্যাড়ার মো. নুরুন্নবী নিক্সনকে তার পিতার জানাজা পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য এমন অভিনব জানাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু’বছর আগে নিক্সন ও তার সহযোগী পুলিশের তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী সরওয়ার একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আটক আছেন।

নিক্সনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার সকালে নগরীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে মারা যান নিক্সনের পিতা ও নগরীর বায়োজিদ বোস্তামী থানার আতুরার ডিপু জঙ্গল পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ।

এর পর কারাবন্দি নিক্সনকে প্যারোলে মুক্তি দিতে স্বজনরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক কারাবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারের প্রতি।

নিক্সনের শ্যালক  মামুন জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক আবেদনটি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে নেয়ার পর জেল সুপার আবেদনপত্রের ওপর জেলা প্রশাসক পুলিশ প্রটেকশনের বিষয়ে কিছু উল্লেখ না করার  অজুহাতে নিক্সনকে পিতার জানাজার জন্য কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

নিক্সনের ঘনিষ্ট টুটুল এ বিষয়ে জানান, “আমরা অনেক অনুনয় বিনয় করার পর কারা কর্তৃপক্ষ কারাগারের ভেতরেই জানাজা পড়ার ব্যবস্থা করেন। পরে নিক্সনের পিতার লাশ কারাগারে নেয়ার পর বেলা পৌনে ৩টার দিকে কারা অভ্যন্তরেই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।” জানাজায় নিক্সনসহ কারাবন্দি কয়েকজন এবং বাইর থেকে ১০/১৫ জন আত্মীয় স্বজন অংশ নেয়।

ঘটনার বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় কারগারের ফিক্সড় ফোন, জেলার ও জেল সুপারের মোবাইলে বারংবার চেষ্টার পরও কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি।

এ ব্যপারে জানতে চাওয়া হলে সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার নতুন বার্তা ডটকমকে জানান, “জেলের অভ্যন্তরে বাইর থেকে নিয়ে কারো জানাজা পড়ার কোন বিধান জেল কোড়ে নেই। এটা আমি প্রথম শুনলাম।”

মানবাধিকার আন্দোলন সংগঠক অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান নতুন বার্তা ডটকমকে জানান,  “এটা একটা অভিনব ঘটনা। প্যারোলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক মুক্তির আদেশের পর কাউকে মুক্তি না দেয়া ওরফে বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। ”

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বেসরকারি কারা পরিদর্শক জানান, কারা অভ্যন্তরে কোনো হাজতি মারা গেলে জানাজা পড়া যায়। কিন্তু বাইরের কোনো লাশ কারাগারের অভ্যন্তরের নিয়ে জানাজা পড়ার কোনো নিয়ম বা আইন জানা নেই।

Leave a Reply