সকল ধর্মের মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করবে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সকল ধর্মের মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করবে সরকার। সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে ধর্ম পালন করবে, মর্যাদা নিয়ে চলবে। আমাদের উন্নয়ন সকলের উন্নয়ন, কাউকে বাদ দিয়ে নয়। একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠায় বৌদ্ধসহ সকল ধর্ম বিশ্বাসের মানুষকে দেশের উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহত্ উত্সব বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবনের সবুজ লনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য অর্জনে সকল ধর্ম-বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এখানে উপস্থিত আছেন তাদের এইটুকুই বলবো, আপনাদেরই দেশ, আপনাদেরই মাটি- সকলেই সমমর্যাদা নিয়ে ধর্ম পালন যেভাবে করবেন এবং সেই মর্যাদা নিয়েই আবার চলবেন, আমরা সেটাই চাই।’ দেশের সকল গোষ্ঠীকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করার জন্যই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন সকলকে নিয়েই, কাউকে বাদ দিয়ে নয়, আমরা সকলের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন। এ সংগঠনের মাধ্যমেই এ দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি আমরা। আমরা সব সময় এটাই মনে রাখবো, বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। কারো কাছে হাত পেতে নয়, করো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, মর্যাদার সঙ্গে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নে গড়ে তুলবো সোনার বাংলাদেশ হিসেবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ওই লুটেরা, দুর্নীতিবাজ যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী তাদের এই মাটিতে কোনো স্থান হবে না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা শান্তি চায় এবং শান্তির সঙ্গে তারা বসবাস করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের প্রতিটি নাগরিক আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে চলবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, নিজের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করবে। সরকার হিসেবে সব রকম সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকে যতটুকু এদেশের মানুষ পাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পরই তারা তা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের সকল ধর্মের মূলমন্ত্র এক। বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা শান্তি। গৌতম বুদ্ধ মানুষে মানুষে সংঘাত পরিহার করতে বলে গেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে সকল ধর্মের মানুষ নিরপেক্ষভাবে ধর্ম পালন করবে। সকলের মাঝে সৌহার্দ্য থাকবে। সকলে মিলে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলবো। জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সহিংসতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনা যেন আর না ঘটে।
অনুষ্ঠানে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, অনুষ্ঠানে সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো, উপসংঘ প্রধান রাজ সত্যপ্রিয় মহাথেরো, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ভিক্ষু সংস্থার সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো, আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, বৌদ্ধকল্যাণ সংঘের ট্রাস্টি সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের অপর ট্রাস্টি দয়াল কুমার বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এর আগে বৌদ্ধ ধর্মগুরু এবং সংঘ নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রকাশিত একটি ব্রুশিয়ারের মোড়ক উন্মোচন করেন।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুঁজুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার পথ খুঁজে বের করতে তার সরকারের বার্তা মিয়ানমার সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে দেশটির বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মিয়ো মিন্ত থানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত্ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে আমাদের একত্রে একটি পন্থা খুঁজে বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী হিসেবে আমরা সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান করতে চাই। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, শরণার্থীরা বাংলাদেশে সামাজিক ও পরিবেশগত চাপ সৃষ্টি করছে— বাংলাদেশের এ অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বহু অ-নথিভুক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করছে। রোহিঙ্গারা খুবই মানবেতর অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোকপাত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক এবং এ ক্ষেত্রে কফি আনান কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে একমত।