সংসদ বসছে বুধবার, অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ছে
প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি প্রস্তাবের মধ্যেই সংসদের চলমান অধিবেশনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বসছে বুধবার। এ বৈঠকের পরই টানা ১৩ দিন বিরতি দিয়ে বিকাল পাঁচটায় শুরু হচ্ছে সংসদের মুলতবি বৈঠক। সরকারদলীয় এমপিদের দাবি— আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার পথ খোলা রাখতে সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি অধিবেশনে যোগ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানাবে। আর বিরোধী দলের এ দাবিকে সাংবিধানিকভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে মহাজোট।
চলতি অধিবেশন আর কয় কার্যদিবস চলবে তা কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংসদ ভবনে বেলা সাড়ে ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক হবে। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এ কমিটির সদস্য। আগামী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতি অধিবেশন চলতে পারে। আর এ অধিবেশনে বিএনপি সংসদে ফিরলে তা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর পরিস্থিতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি দৈনিক বর্তমানকে বলেন, জাতীয় সব সমস্যা নিয়ে সংসদেই আলোচনা হতে পারে। আশা করি সংসদে আলোচনার মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দূর হবে।
সূত্র জানায়, বিরোধী দল সংসদে এসে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে ধরবে। এ নিয়ে প্রথমেই পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখতে পারেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। আর তার বক্তব্যকে সাংবিধানিকভাবে মোকাবিলা করবে মহাজোট। এ ক্ষেত্রে তারা সংবিধানের ধারা উল্লেখ করে বক্তব্য দেবেন। জানা গেছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাসদের মঈনউদ্দীন খান বাদল প্রমুখ বক্তব্য রাখবেন।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে সংসদের মেয়াদ শেষ হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন এবং অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হলে সংসদ বহাল থাকবে এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরাও স্বপদে বহাল থাকবেন। আর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হলে এমপিরা স্বপদে থাকবেন না। তবে ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে হবে ভেঙে দেয়া সংসদের সাংসদদের মধ্য থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দৈনিক বর্তমানকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখতেই অধিবেশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিএনপি সংসদে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহালের দাবি জানালে তা সাংবিধানিকভাবেই মোকাবিল করা হবে। এছাড়া সংসদের অধিবেশন ২৪ অক্টোবরের পরও চালানো যাবে। এ বিষয়ে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মঈনউদ্দীন খান বাদল বলেন, বিএনপি সংসদে এলে মহাজোট তাদের স্বাগত জানাবে। তবে তাদের দাবিদাওয়া অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ী হতে হবে। কারণ সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তো সংবিধানেই ছিল; কিন্তু মহাজোট সরকার তা বাতিল করেছে। এখন তারা সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে তো কোনো বাধা নেই; কিন্তু সরকারি দল তা না করে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে।
বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে গত ১২ সেপ্টেম্বর ১৯তম অধিবেশন শুরু হয়। ওই দিন কার্যউপদেষ্টা কমিটি আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত অধিবেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিব সভায় বলেছিলেন, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদ থাকবে। তবে অধিবেশন হবে না। চলতি সংসদের ১৯তম অধিবেশন শুরুর দিন উদ্বোধনী বক্তব্যেও জানিয়েছিলেন ২৪ অক্টোবর এ অধিবেশন শেষ হচ্ছে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী ২৪ অক্টোবরের পর এ সংসদ আর থাকছে না বলে তাদের বক্তৃতায় উল্লেখ করেন। তবে এ অধিবেশনের কার্যদিবস বাড়ানোর সিদ্ধান্তে এর সমালোচনা করে আসছে বিএনপি। তাদের দাবি ২৪ অক্টোবর সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।