শ্বাসনালি পোড়া রোগীর মৃত্যুঝুঁকি এত বেশি কেন?
যখন ত্বক বা শ্বাসনালির মিউকাস মেমব্রেন পুড়ে যায় তখন দেহের সব প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক জৈবিক ও রাসায়নিক-বিপাক প্রক্রিয়া এবং অন্য অতিপ্রয়োজনীয় গ্রন্থিসমূহ যেমন : লিভার, কিডনিয়-এমনকি সব দেহকোষের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে বার্ন স্ট্রেচ শরীরের সব রাসায়নিক উত্তেজক গ্রন্থির সিক্রেশন আরও দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায় এবং অতি অল্প সময়ে ওই পোড়া রোগীর সারা শরীর ফুলে যায়। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইডিমা ফরমেশন বলে। ইডিমার কারণে বাতাসের মধ্যে থাকা অতিপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহকোষে পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছতে পারে না বিধায় পোড়া রোগী চিকিৎসায় ভালো বা আবার মন্দও হতে পারে। রোহীকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে- পরিমাপ করতে হবে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মুখ, মুখগহ্বরের উপর-নিচ ও শ্বাসনালি কতটুকু ফুলে গেছে, ধোঁয়ার তীব্রতা কেমন ছিল, কি পরিমাণ গরম ছিল, তা কতক্ষণ যাবৎ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বার্ন করেছে, শ্বাস-প্রশ্বাস কতটুকু সীমিত বা দম নিতে, ঢোক গিলতে কতটুকু কষ্ট, নাকের লোম, গলার স্বর পরিবর্তন কেমন, নাকে ঝুল বা কার্বনিয়াস স্পুটাম আছে কিনা- এ সবই অভিজ্ঞ নিবিড় পরিচর্যাকারীরাই পরখ করতে পারেন। তবে Fiberoptic Nasopharyn goscopy করে উপরোক্ত শ্বাসনালির গতিপথ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব। অহেতুক বা অনভিজ্ঞতার কারণে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানোর জন্য শ্বাসনালিতে টিউব দিলে শ্বাসনালির অত্যন্ত ঢেলিকেট মিউকাস মেমব্রেনVocal Cord, Epiglotis, Subglotic, Supraglotic ইত্যাদি জায়গায় আঘাতজনিত কারণে আরও বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। একে মেডিকেল সাইন্স এ Intubation induced injury বা Ventilator induced injury ও ঞযবৎসধষ Thermal induced injury বলা হয়। তাই পর্যাপ্ত কৃত্রিম শ্বাস প্রদানের প্রয়োজনীয় প্রমাণ ছাড়া শ্বাসনালিতে টিউব দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। শুধু অভিজ্ঞ নিবিড় পরিচর্যাকারী গভীর পর্যবেক্ষণ করে যদি বুঝতে পারেন, ওই শ্বাসনালি পোড়া রোগীর উল্লিখিত লক্ষণগুলো আছে এবং যদি Fiberoptic nasopharyngoscopy করে দেখতে পারেন যে শ্বাসনালির গতিপথ গাঠনিক বিকৃত পরিবর্তন হয়ে রোগী Respiratory Failure এর দিকে যাচ্ছে। কেবল তখনই শ্বাসনালিতে টিউব দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাপোর্ট দেওয়ার বিধান আছে। অতীত গবেষণায় বিজ্ঞানী ক্লাক ইট অল প্রমাণ করেছেন যে, Smoke inhalation রোগীর শতকরা ৫১ ভাগের অধিক ক্ষেত্রে কৃত্রিম শ্বাসের জন্য শ্বাসনালিতে টিউব দেওয়ার দরকার হয় না। অন্যথায় এই শ্বাসনালির কৃত্রিম শ্বাসের জন্য যান্ত্রিক সাপোর্ট রোগীর অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। প্রফেসর ডেমলিং এবং প্রফেসর চেন শ্বাসনালি পোড়া রোগীর মৃত্যুর বৈজ্ঞাকি রহস্য নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছেন- তারা বলেছেন শ্বাসনালি পোড়া রোগীর প্রথমত শ্বাসনালির গতিপথে অতিরিক্ত রক্তরস জমা হতে থাকে, একে বলে পালমোনারি কনজেশন তারপর পালমোনারি হাইপার টেনশন, পরবর্তীতে শ্বাসনালির গতিপথ সরু হয়, এই গতিপথে ধীরে ধীরে ইপিথেলিয়াল স্লাফ, ইপিথেরিয়াল কাস্টস জমা হয়, ফলে শ্বাসনালির সিলিয়ারি মোভমেন্ট বাধাগ্রস্ত হয় এবং শ্বাসনালির গতিপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তখন শ্বাসনালির ভেতরের অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা বের হতে পারে না বিধায় জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন ফুসফুসে গিয়েও ঊীপযধহমব হতে পারে না। এই অবস্থায় শ্বাসনালির চারপাশের ক্ষতিকারক জীবাণু শ্বাসনালিকে সংক্রমিত করে ও রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আরও জটিল হয়ে যায় এবং মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, র) প্রায় সব প্রকার ওষুধের কার্যকারিতা সীমিত হয়ে যায়। রর) শরীরের সব স্বাভাবিক জৈবিক রাসায়নিক ও বিপাক প্রক্রিয়া ছিন্নভিন্ন হয়ে গ্রন্থিগুলো যেমন : লিভার কিডনি এমনকি দেহকোষের কার্যকারিতা বিপন্ন হয়। তাই শ্বাসনালি পোড়া রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি শতভাগ বেড়ে যায়।
ডা. মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, সহকারী অধ্যাপক,
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৮১৯-২৯৪০৮৫